
বয়স বাড়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে শুধু বয়স বাড়ালেই হয় না, স্বাধীনভাবে বাঁচাটাও জরুরি।
মোবিলিটি, মানসিক তীক্ষ্ণতা এবং আত্মনির্ভরতা ধরে রাখতে হলে আমাদের জীবনধারায় সচেতন পরিবর্তন আনতে হয়, এবং সেটা অনেক আগেই শুরু করতে হয়।
সত্যি কথা হলো, আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলোই নির্ধারণ করে দেয় ভবিষ্যতে আমরা কতটা স্বাধীন থাকতে পারব। এই অভ্যাসগুলো তরুণ বয়সে নিরীহ মনে হলেও, বার্ধক্যে এসে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিভিন্ন ভ্রমণে আমি অনেক প্রবীণ মানুষকে দেখেছি, যাঁরা আশ্চর্যরকম ফিট ও সক্রিয়। তাঁদের গোপন রহস্য জানতে চাইলে কেউই কোনো দামী সাপ্লিমেন্ট বা কঠোর ডায়েটের কথা বলেন না।
তাঁরা বরং বলেন-ছোট কিছু অভ্যাস বদলানোই তাঁদের সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি: যেমন নিয়মিত হাঁটা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা নতুন কিছু শেখা।
আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা এই ছোট ছোট পরিবর্তনকে গুরুত্ব না দিয়ে এমন অভ্যাস আঁকড়ে ধরে রাখেন, যেগুলো তাঁদের স্বাধীনতা চুপিসারে কেড়ে নিচ্ছে।
চলুন, দেখে নিই এমন ৫টি অভ্যাস যা এখনই ছাড়তে হবে, যদি আপনি ৭০-এর পরে শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর থাকতে চান।
১. শারীরিক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলা
এক জায়গায় বসে থাকা প্রথমে আরামদায়ক মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি আপনার শক্তি ও ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
যাঁরা আশির কোটায় পৌঁছেও সহজে চলাফেরা করতে পারেন, তাঁরা বছরের পর বছর নিয়মিত শরীরচর্চা করেছেন।
ম্যারাথন দৌড়ানোর দরকার নেই, প্রতিদিন brisk walk, হালকা স্ট্রেচিং কিংবা নাচের ক্লাসই যথেষ্ট।
কারণ শারীরিক অক্ষমতাই সাধারণত স্বাধীনতা হারানোর প্রথম ধাপ।
২. জাঙ্ক ফুড নির্ভর ডায়েট
প্রতিদিন ফ্রাই, বার্গার, পিজ্জা খাওয়া শুরুতে তেমন কিছু মনে না হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস ও গাঁটের ব্যথার কারণ হতে পারে।
এই অসুস্থতাগুলো শুধু আয়ু কমায় না, বরং স্বাধীনভাবে চলাফেরা, গাড়ি চালানো বা হাঁটার মতো সাধারণ কাজেও বাঁধা সৃষ্টি করে।
হালকা পরিবর্তন আনুন—চিপসের বদলে ফল, সফট ড্রিংকের বদলে পানি বেছে নিন।
এই ছোট পরিবর্তনগুলো আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক বেশি ফিট রাখবে।
৩. সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা
একাকীত্বের কারণে মানসিক অবসাদ ও স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
হার্ভার্ডের একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত—বন্ধুত্ব ও সামাজিক বন্ধন জীবনের মান বাড়ায় এবং বার্ধক্যেও মানসিক সতেজতা বজায় রাখে।
একজন আত্মীয়ের কথা মনে পড়ে, যিনি ৭০-এর কোঠায় গিয়েও পরিবারের প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। তাঁর গোপন রহস্য? সামাজিক সম্পর্ক ধরে রাখা।
তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে আড্ডা দেন, গল্প বলেন, এবং প্রতিদিনের জন্য একটা উদ্দেশ্য খুঁজে নেন।
৪. আজীবন শেখার ইচ্ছা না থাকা
স্কুল-কলেজ শেষ মানেই শেখা শেষ—এই ধারণা ভুল।
প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। যদি আমরা শেখার আগ্রহ ধরে না রাখি, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা, কেনাকাটা, বা যোগাযোগের নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারি।
নতুন ভাষা শেখা, আঁকা শেখা, কিংবা অনলাইন কোর্সে অংশ নেওয়া শুধু সময় কাটানোর উপায় নয়—এগুলো মস্তিষ্ককে সচল রাখে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমায়।
৫. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা এড়িয়ে চলা
“যখন সমস্যা নেই, তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া কেন?”—এই চিন্তাভাবনা অনেকের।
কিন্তু নিয়মিত চেকআপে অনেক বড় অসুখ আগেভাগেই ধরা পড়ে, যা আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা থেকে রক্ষা করতে পারে।
মনে রাখবেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা মানে শুধু খরচ বা ঝামেলা নয়—এটা আপনাকে ভবিষ্যতে স্বাধীনভাবে জীবন কাটানোর পথে এগিয়ে রাখে।
চোখ, দাঁত, শ্রবণশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও যত্ন নিন। সময় মতো চিকিৎসা ভবিষ্যতের বড় বিপদ এড়াতে পারে।
সবকিছু একত্রে ভাবলে
এই ৫টি অভ্যাস ছেড়ে দেওয়া যতটা কঠিন মনে হয়, এর সুফল ততটাই দীর্ঘস্থায়ী।
অল্প অল্প করে প্রতিদিনের জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন—হাঁটার অভ্যাস, স্বাস্থ্যকর খাবার, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, নতুন কিছু শেখা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
৭০-এর পরে স্বাধীন থাকা কপালের ব্যাপার নয়—এটা এখনকার অভ্যাসের ফল।
আজকের ছোট সিদ্ধান্তই আগামী দিনে বড় উপহার হয়ে উঠতে পারে—একটা আত্মনির্ভর, সম্মানজনক ও স্বাধীন জীবন।
মুমু