ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ডায়েটে আনুন এই ১০টি পরিবর্তন!

প্রকাশিত: ১০:২১, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ডায়েটে আনুন এই ১০টি পরিবর্তন!

বর্তমান সময়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল উচ্চ কোলেস্টেরল। এটি নীরব ঘাতক হিসেবে শরীরের মধ্যে ধীরে ধীরে কাজ করে। তবে আশার কথা হলো, ওষুধ নয়,খাদ্যাভ্যাসের কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর পরিবর্তন এনে আপনি কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন খুব সহজেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের ডায়েটে কিছু নির্দিষ্ট উপাদান যোগ করলে শরীর নিজেই খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে শুরু করে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে। নিচে এমন ১০টি কার্যকরী খাদ্যাভ্যাস তুলে ধরা হলো, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে দিতে পারে একটি সুস্থ ও শক্তিশালী হৃদয়।

 

১. রান্নায় ব্যবহার করুন স্বাস্থ্যকর উদ্ভিজ্জ তেল
বাজারে সহজলভ্য সয়াবিন, সূর্যমুখী, ক্যানোলা কিংবা অলিভ অয়েলের মতো তেলগুলোতে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ কম, আবার আছে উপকারী মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে। ঘি বা বনস্পতি তেল ব্যবহার কমিয়ে এই তেলগুলো বেছে নেওয়া উচিত।

২. ফ্যাটি মাছ রাখুন সাপ্তাহিক খাদ্যতালিকায়
স্যালমন, টুনা, ম্যাকেরেল, সার্ডিনের মতো সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এই উপাদানটি খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এমন মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন নিউট্রিশনিস্টরা।

৩. পুরো শস্য রাখুন আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে
সাদা ভাত বা ময়দার পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, ওটস, আটার রুটি বা বার্লি বেছে নিন। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, যা রক্তে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি হজম শক্তিও বাড়ায়।

৪. স্টেরল ও স্ট্যানল সমৃদ্ধ খাবার খান
বিভিন্ন খাদ্যে প্রাকৃতিকভাবে থাকা উদ্ভিজ্জ স্টেরল ও স্ট্যানল কোলেস্টেরলের শোষণ রোধ করে। কিছু বিশেষ দুধ, দই বা স্প্রেডে এগুলো যুক্ত করা হয়। প্রতিদিন মাত্র ২ গ্রাম স্টেরল খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

৫. সয়া ও সয়া-জাত খাবার নিয়মিত খান
সয়াবিন, টফু, সয়া মিল্কে আছে সয়াবিন প্রোটিন, যা রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরল হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি পশু উৎসের প্রোটিনের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।

৬. ঋতুভিত্তিক ফলমূল ও শাকসবজি রাখুন প্রতিদিনের তালিকায়
সবুজ শাক, বেগুন, কলা, কমলা, আপেল, পেঁপে—এমন সবজি ও ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ফাইবার। এগুলো শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ভেঙে দিতে সাহায্য করে এবং লিভারকে রাখে পরিষ্কার।

৭. চর্বিহীন প্রোটিন বেছে নিন
মুরগির বোনলেস মাংস, ডাল, ডিমের সাদা অংশ, ছোলা বা মসুর ডায়েটের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করে, আবার কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ায় না। এসব খাবার শরীর গঠনে সহায়ক হলেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না।

৮. মশলা ব্যবহার করুন বুঝেশুনে
আদা, রসুন, মেথি, হলুদ ও দারুচিনির মতো প্রাকৃতিক মশলাগুলো রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে প্রমাণিতভাবে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত লবণ, ঝাল বা তৈলাক্ত মশলা প্রয়োগ শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

৯. অ্যালকোহল ও ধূমপান থেকে দূরে থাকুন
এই দুই অভ্যাস রক্তনালির ক্ষতি করে এবং শরীরে কোলেস্টেরল ব্যালেন্স নষ্ট করে। ধূমপান HDL (ভালো কোলেস্টেরল) কমিয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ তৈরি করে।

১০. চিনি ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট কমান
প্যাকেটজাত খাবার, মিষ্টি, সফট ড্রিংকস ও ময়দার তৈরি পণ্যে থাকে উচ্চ মাত্রার চিনি ও রিফাইন্ড কার্ব। এগুলো শরীরে ক্যালোরি বাড়ায় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।


আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতেই। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে এই ১০টি পরিবর্তন আনলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন। ওষুধ নয় সতর্কতা আর নিয়মিত অভ্যাসেই সুস্থ থাকুক আপনার হৃদয়।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2t64w5a8

আফরোজা

×