
ছবি: প্রতীকী
আপনি কি জানেন আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে তা হতে পারে আপনার ঘাড়ের অস্বাভাবিক কিছু পরিবর্তনের কারণে?
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং ওষুধ খেয়ে, সিটি স্ক্যান করেও কোনো কিছুর সমাধান না পান, তাহলে হতে পারে আপনি সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথায় ভুগছেন।
অধ্যাপক ডাঃ আলতাফ সরকার এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা, মাথা থেকে নয় বরং সার্ভিকাল মেরুদণ্ড বা ঘাড় থেকে উদ্ভূত হয়। এই ধরনের মাথাব্যথা মূলত ঘাড়ের পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার পেছন, মাথার উপরের অংশ এবং কখনো কখনো চোখের পেছনেও অনুভূত হতে পারে।
সার্ভিকোজেনিক মাথা ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ
ঘাড়ের মাংসপেশী সংকোচন বা স্ট্রেইন
দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে কাজ করলে, ঘাড়ের মাংসপেশীতে চাপ সৃষ্টি করে যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
ঘাড়ের ডিস্ক বা জয়েন্টে সমস্যা
অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ডিস্ক বুলজ বা ঘাড়ের জয়েন্টগুলোর মাংসপেশীর মধ্যে অস্বাভাবিকতা মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
ঘাড়ের হাড়ের অস্বাভাবিকতা
সি-৩, সি-৪ বা সি-৫ হাড়ে সমস্যা (যেমন স্লিপড ডিস্ক বা হাড়ের গঠনগত ত্রুটি) মাথাব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
ক্ষত বা আঘাত
ঘাড়ে আঘাত, যেমন মোটরবাইকের দুর্ঘটনায় "হোয়িপল্যাশ ইনজুরি" বা কোমরের হঠাৎ মোচড় লাগা, সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
অসংগঠিত বা খারাপ পোজিশন
দীর্ঘ সময় ভুলভাবে বসে থাকা বা ঘাড়কে ভুলভাবে ঘোরানো মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং এর ফলে মাথাব্যথা হতে পারে।
মাথার পেছনের মাংসপেশীর মধ্যে উত্তেজনা
টেনশন বা উদ্বেগের কারণে মাথার পেছনের মাংসপেশী সংকুচিত হয়ে মাথাব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যাথলেটিক এক্সারসাইজ বা অতিরিক্ত শারীরিক চাপ
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা মেকানিক্যাল স্ট্রেইন মাথাব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
বয়স
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ের জয়েন্ট ও ডিস্কে পরিবর্তন আসে, যা সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথায় কী করণীয়?
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
প্রথমে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। বিশেষত, নিউরোলজিস্ট বা ফিজিওথেরাপিস্ট, যে এই ধরনের মাথাব্যথা নির্ণয় এবং চিকিৎসা করতে সক্ষম।
ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপি সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথার চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্ট ঘাড়ের পেশী এবং জয়েন্টগুলোর স্ট্রেচিং এবং শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করায়। বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা ঘাড়ের পেশী ম্যাসাজ করালে উপশম পাওয়া যেতে পারে। এতে মাংসপেশী শিথিল হয়ে মাথাব্যথা কমতে পারে।
প্রযুক্তিগত সহায়তা (হট এবং কোল্ড থেরাপি)
ঘাড়ের পেশীতে তাপ প্রয়োগ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মাংসপেশী শিথিল হয়। আবার ঘাড়ের প্রদাহ কমাতে ঠাণ্ডা তাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
দৈনন্দিন কাজের অভ্যাসে পরিবর্তন
দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকার সময় ঘাড়ের পোজিশন ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘ সময় কাজ করার সময় সঠিকভাবে বসার ধরন মেনে চলুন। ঘাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ এড়ানোর জন্য মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বা মেদও ঘাড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন।
ওষুধের ব্যবহার
মৃদু মাথাব্যথার জন্য সাধারণ পেইনকিলার যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলোর ব্যবহার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত। যদি ঘাড়ের পেশী শক্ত বা টান হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে মাংসপেশী শিথিলকারী ওষুধ দিতে পারেন।
জীবনযাপনে পরিবর্তন
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা ঘাড়ের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়া পর্যাপ্ত এবং শান্তিপূর্ণ ঘুম মাথাব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথায় ফিজিওথেরাপি চমকপ্রদভাবে কাজ করে। আপনি দীর্ঘদিন যাবৎ মাথাব্যথার কোনো সমাধান খুঁজে না পেলে চিকিৎসকের এবং ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র
.facebook.com/backpainspine/videos
সুরাইয়া