ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে চান? জানুন ‘এ-বি-সি-ডি-ই’ ফর্মুলা!

প্রকাশিত: ০৮:১২, ২২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৮:১৩, ২২ এপ্রিল ২০২৫

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে চান? জানুন ‘এ-বি-সি-ডি-ই’ ফর্মুলা!

হৃদরোগের পেছনে কারণ যেমন জটিল, ঠিক তেমনই প্রতিরোধের উপায়ও হতে পারে সহজ ও কার্যকর—যদি আপনি সচেতন থাকেন। হৃদরোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা আপনার নিজেরই নিয়ন্ত্রণে। জনস হপকিন্সের কার্ডিওলজিস্ট ও সিসারোন হার্ট ডিজিজ প্রিভেনশন সেন্টারের পরিচালক ড. মাইকেল জে. ব্লাহা জানাচ্ছেন, কীভাবে মাত্র পাঁচটি ধাপ A-B-C-D-E মেনে চললেই আপনি রাখতে পারেন হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সজীব।

চলুন, দেখে নেওয়া যাক এই সহজ অথচ কার্যকর ফর্মুলার বিস্তারিত-

A: হৃদরোগের ঝুঁকি নিরূপণ করুন
হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে হলে আগে জানতে হবে, আপনি আদৌ ঝুঁকির মধ্যে আছেন কি না। অনলাইনে ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য নানা ধরনের ক্যালকুলেটর রয়েছে, যেগুলো ১০ বছরের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা বোঝাতে পারে। তবে তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

A: অ্যাসপিরিন সেবন
যাঁদের হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, বিশেষ করে ডায়াবেটিস বা রক্তনালীর সংকোচনের মতো সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য অল্পমাত্রার দৈনিক অ্যাসপিরিন সেবন উপকারী হতে পারে। তবে এটি নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

B: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
উচ্চ রক্তচাপ (১৪০/৯০ বা তার বেশি) শুধু হৃদরোগই নয়, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং ডিমেনশিয়ারও বড় কারণ। ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত হাঁটা-দৌড়, কম লবণযুক্ত ও বেশি ফলমূল-সবজিভিত্তিক খাদ্যগ্রহণ, ও মদ্যপান কমিয়ে আনলেই অনেকাংশে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রয়োজনে ওষুধ সেবনও দরকার হতে পারে।

C: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (LDL), যাকে বলা হয় ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল, ধীরে ধীরে রক্তনালীর ভেতরে জমে গিয়ে হৃদয়ের রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এলডিএল লেভেল ১০০ mg/dL-এর নিচে রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা এই মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে স্ট্যাটিন নামের ওষুধও কার্যকর হতে পারে।

C: ধূমপান ও তামাক বর্জন
ধূমপান হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, এটি ফুসফুস, মুখ ও গলার ক্যানসারের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত। আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে এখনই তা বন্ধ করাই হৃদরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হতে পারে। তামাক ছাড়ার জন্য রয়েছে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ওষুধ বা কাউন্সেলিং সেশন-এই সুযোগগুলো কাজে লাগান।

D: ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস ও প্রিডায়াবেটিস-দুটিই হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, অন্ধত্ব ও পায়ের কেটে ফেলা পর্যন্ত ঝুঁকি বাড়ায়। আপনি যদি ডায়াবেটিসের দিকে ঝুঁকছেন, তবে খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এখনই তা ঠেকাতে হবে। যদি ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও চিকিৎসা আপনাকে গুরুতর জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে।

D: খাদ্যাভ্যাস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
হৃদয়বান খাদ্যাভ্যাস মানেই স্বাস্থ্যবান জীবন। প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, হোল গ্রেইন, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছ, বাদাম ও ডাল খাবারের তালিকায় রাখুন। এড়িয়ে চলুন চিনি, মিষ্টি পানীয়, রেড মিট, ও সাদা ভাত বা পাউরুটির মতো রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট। যদি আপনার বিএমআই ২৫-৩০ এর মধ্যে হয়, তাহলে কিছুটা ওজন কমালেই হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে।

E: নিয়মিত ব্যায়াম
শরীরচর্চা শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেই না, বরং হৃদরোগসহ বহু রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি শারীরিক কার্যক্রমের পরামর্শ দেয়। অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। শুধু ব্যায়াম নয়, চেষ্টা করুন দৈনন্দিন চলাফেরা বাড়াতে-কম বসে থাকা, কম স্ক্রিন টাইম আর বেশি হাঁটাহাঁটি করতে হবে।

হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে চিকিৎসা বা ব্যয়বহুল থেরাপির প্রয়োজন নাও হতে পারে বরং প্রয়োজন সচেতনতা ও অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন। ‘এ-বি-সি-ডি-ই’ মডেল মেনে চললেই আপনি সহজেই হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারবেন। এখনই নিজেকে মূল্যায়ন করুন,আপনার হৃদয় আপনাকেই ধন্যবাদ দেবে।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/45jn7ntb
 

আফরোজা

×