
ছবি: প্রতীকী
ইউরিক অ্যাসিড শরীরের একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ, যা পিউরিন নামক উপাদান থেকে তৈরি হয়। পিউরিন মূলত শস্য, মাছ, মাংস ও কিছু সবজিতে পাওয়া যায়। শরীরে এই পিউরিন ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয় এবং এটি সাধারণত কিডনি দিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে, যখন রক্তে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তখন তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী হয়?
যদি শরীর ইউরিক অ্যাসিড ঠিকমতো বের করতে না পারে, তাহলে রক্তে এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে গেঁটে বাত হতে পারে। এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক, বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুলে ব্যথা, ফোলা ও লালচে হয়ে যায়। এছাড়া জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলা হতে পারে। অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে জমে কিডনির পাথর তৈরি করতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার কারণ
খাদ্যাভ্যাস:
পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন: মাছ, মাংস, কলিজা, কিডনি এবং বিশেষ করে মদ ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
কিডনির কার্যক্ষমতা:
যদি কিডনি ইউরিক অ্যাসিড ফিল্টার করতে না পারে, তবে শরীরে জমে এর পরিমাণ বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত ওজন ও ডায়াবেটিস:
গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
বংশগত প্রভাব:
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যার ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। পরিবারের কারও এই সমস্যা থাকলে তা বংশানুক্রমে বিস্তার লাভ করতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অপরিহার্য। দৈনিক ৮–১০ গ্লাস পানি পান করলে ইউরিক অ্যাসিডের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
শাকসবজি ও ফলমূল
শাকসবজি, বিশেষত পালংশাক, ব্রোকলি, কাঁচা সবজি এবং ফল যেমন আপেল, চেরি, কলা, আঙ্গুর ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: কমলা, লেবু ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক উপাদান
আদা ইউরিক অ্যাসিডজনিত ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এছাড়া, হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রদাহ কমায় এবং গেঁটে বাতের ব্যথা উপশমে সহায়তা করে।
খাদ্য থেকে কিছু উপাদান বাদ দিন
পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন: লাল মাংস, কলিজা, কিডনি ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। মদ, ফাস্ট ফুড এবং প্যাকেটজাত খাবার, চিনি ও চিনিযুক্ত পানীয় থেকে দূরে থাকুন।
ওজন কমানো
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমানো সম্ভব। তাই ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পরিচর্যা করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম
হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শরীরে চাপ তৈরি হতে পারে, এজন্য ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
যদি ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং গেঁটে বাত, জয়েন্টে তীব্র ব্যথা কিংবা কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র
https://www.facebook.com/reel/1030262732499240
সুরাইয়া