ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

কিডনি ড্যামেজ

ডা. রাইসুর আক্তার

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ২১ এপ্রিল ২০২৫

কিডনি ড্যামেজ

সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তত্ত্ব মতে বাংলাদেশে প্রায় ৩  কোটি ৮০ লাখ মানুষ এ কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। তারমধ্যে কিডনি সিস্ট, কিডনি পাথর, একিউট কিডনি ডিজিস, র‌্যাপিডলি ইনক্রিজড কিডনি ডিজিজ, ক্রনিক কিডনি ডিজিস, ইত্যাদি সমস্যা অন্যতম।
কিডনি ডিজিজের লক্ষণসমূহ :
১/ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা।
২/বমি বমি ভাব ও বমি।
৩/পেট ও মাজা ব্যথা।
৪/মূত্র কৃচ্ছ্রতা অথবা প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়া।
৫/হাইপারটেনশন অর্থাৎ হাই প্রেসার হয়ে যাওয়া।
৬/পায়ের দিকে অথবা পুরো শরীর ফুলে যাওয়া।
৭/শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।
৮/প্রস্রাব পরিমাণে কমে যাওয়া।
৯/প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া অথবা ঘোলাটে ধরনের প্রস্রাব হওয়া।
১০/দুর্গন্ধ প্রস্রাব হওয়া।
১১/সঙ্গে জ্বর থাকতে পারে।
এই সকল লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ফিজিশিয়ানের সঙ্গে দেখা করুন এবং পরামর্শ গ্রহণ করুন।
কিডনি ড্যামেজের কারণসমূহ :
১/যদি কোনো পেশেন্ট দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন, তবে অতিরিক্ত রক্তের শর্করা থাকার কারণে কিডনির ফিল্টার ইউনিটগুলো এই শর্করা ফিন্টার করতে করতে এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত বা অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই ডায়াবেটিসকে কিডনি ড্যামেজের অন্যতম কারণ বলে গণ্য করা হয়।
২/যদি প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হয় তাহলেও কিডনির ফিলটার ইউনিটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যেমন প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি, কিডনিতে পাথর, কিডনিতে সিস্ট, ইত্যাদি কারণবশত প্রস্রাব নিঃসরণ না হলে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে।
৩/যদি কারো প্রেসার হাই থাকে তাহলে নেফ্রনগুলোর উপরে প্রচন্ড চাপ পড়ে কারণ কিডনি প্রতিদিন প্রায়ই ১৭৬ লিটার ব্লাড ফিল্টার করে তা থেকে দেড় থেকে ২ লিটার প্রস্রাব প্রোডাকশন করে যদি রক্তের অতিরিক্ত ফ্লুইড থাকে তবে কিডনি এই ফিল্টারের ক্ষমতা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে তখন সরাসরি প্রস্রাবের সঙ্গে এই ব্লাড আসতে শুরু করে এবং কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করে।
৪/বিভিন্ন কারণে শরীরে যখন মারাত্মক ইনফেকশন হয় তখন কিডনি দ্রুত ব্লাড ফিল্টার করে সেই বর্জ্য  পদার্থ বের করে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু শরীরে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ থাকার কারণে কিডনি আস্তে আস্তে ড্যামেজ হতে শুরু করে এবং ওই বর্জ্য পদার্থগুলো শরীরের চর্মরোগের সৃষ্টি করে কারণ তখন শরীরে ফসফরসের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৫/আবার এই শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন অর্থাৎ বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনিদ্রা চলে আসে সে ক্ষেত্রে কিডনি ড্যামেজ এর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
৬/অনিয়মিত অযাচিত এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যথার বড়ি খেলে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে এইজন্য ভালো কোনো ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হয়ে যেকোনো ওষুধ খাওয়া উচিত।
৭/ধূমপান মদ্যপান বা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন কিডনি ড্যামেজের একটি অন্যতম কারণ।
৮/অতিরিক্ত ওজনও কিডনি ড্যামেজের জন্য দায়ী।
প্রতিকার : ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখা,
প্রস্রাব ক্লেয়ার রাখার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দৈনিক অন্তত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা।
হাই প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
নিয়মিত অন্তত আধা ঘণ্টা শরীর চর্চা করা।

প্রতিরাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুমানো।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
ধূমপান বা মদ্যপান এড়িয়ে চলা।
পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করা।
শরিরে যে কোনো জায়গায় ইনফেকশন অথবা জ্বর হলে একজন অভিজ্ঞ ফিজিশিয়ানের সঙ্গে দেখা করা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা। অনিয়ন্ত্রিত অযাচিত বা অযথা ব্যথার ওষুধ বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ না করা।
চিকিৎসাসমূহ : ডাইবেটিস থেকে শুরু করে হাইপার টেনশনে এমনকি কিডনি পাথর কিডনি সিস্ট প্রস্রাবের ইনফেকশন সকল কিছুর বিদেশী  চমৎকার ওষুধ রয়েছে। যেগুলো সেবন করলে ড্যামেজ কিডনিও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা ভালো। এমন কিছু  মেডিসিন রয়েছে যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। যা লক্ষণ বেঁধে প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করা হয়।
ঔষধ সমূহ: ১/অ্যাসিড ফস
২/ নেট্রাম মেয়র  ৩/ বেলেডোনা  ৪/ক্যালকেরিয়া কার্ব
৫/বারবারিস ভল্গ ৬/এপিস মেল ৭/মার্ক কর
৮/ফসফরাস  ৯/ম্যাডরিনাম ১০/ এ্যাপোসাইনাম
১১/লেয়াট্রিস ১২/ইচেনিসিয়া ১৩/আরটিকা ইউরেন্স
১৪/হায়োসিও মাছ ১৫/টেরিবেন্থিনা
১৬/ভিরেট্রাম এল ইত্যাদি অগণিত চমৎকার ওষুধ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে থেকে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করে ব্যবহার করতে পারলে আপনার কিডনি হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ সুস্থ।  

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট ও গবেষক। চেম্বার: হাকিম টাওয়ার (দ্বিতীয় তলা)  মধ্য বাড্ডা, লিংরোড,
গুলশান, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১৯-৪৫৬-৩৯৮, ০১৭১১-৭৯১-৩৬৯

প্যানেল

×