
ছবিঃ সংগৃহীত
যদি আপনি নিয়মিত রসুন দিয়ে রান্না না করে থাকেন, তাহলে এখনই শুরু করার সময়।
রসুন এমন একটি উপাদান যেটা ছাড়া আমার রান্নাঘর বা খাবার কল্পনাই করা যায় না। ছোট এই কন্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে অসাধারণ স্বাদ, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বজুড়ে রান্নায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারণ খাবারকে অসাধারণ করে তোলার পাশাপাশি, রসুনের রয়েছে এমন অনেক স্বাস্থ্যগুণ যা ভালোভাবে খাওয়ার পর গায়ের গন্ধের জন্য নিজেকে একটু ভালো লাগতেই পারে। আমি একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান হিসেবে বলছি—রসুনের পক্ষে আমিও আছি।
রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা কী কী?
রসুন শুধু স্বাদের জন্যই নয়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও এর বেশ খ্যাতি রয়েছে। এর পেছনে মূলত দায়ী সালফার যৌগ, বিশেষ করে অ্যালিসিন নামক উপাদানটি, যেটিই রসুনের সেই তীব্র গন্ধের উৎস। আপনি যখন কাঁচা রসুন কাটেন বা চেপে ভেঙে ফেলেন, তখন অ্যালিসিন তৈরি হয়—এবং গবেষণা বলছে এটি রসুনের অনেক উপকারিতার জন্য দায়ী। প্রথমত, অ্যালিসিন রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এছাড়া, এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করতে পারে, অর্থাৎ এটি কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
সেরা বিষয় হলো—এই উপকার পেতে আপনাকে প্রচুর রসুন খেতে হবে না; প্রতিদিন খাবারে এক বা দুই কোয়া যোগ করলেই ইতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।
রসুনে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণও রয়েছে। তাই অনেকেই ঠান্ডা লাগার শুরুতে রসুন খাওয়ার ওপর ভরসা রাখেন। যদিও বিজ্ঞান এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবু ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তা করার মতো বাড়তি কিছু পেলে ক্ষতি কী!
এছাড়া রসুনে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান, যা শরীরকে সঠিকভাবে কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা রসুন ভালো, না গুঁড়ো রসুন?
এই প্রশ্নটা প্রায়ই শুনি—"কাঁচা রসুন কি সত্যিই ভালো? নাকি গুঁড়ো রসুন দিয়েই চলে?" উত্তর হলো, আপনি কী খুঁজছেন তার ওপর নির্ভর করে দুটোই ভালো।
কাঁচা রসুনের স্বাদ অনেক বেশি তীব্র ও জীবন্ত। আর স্বাস্থ্যগুণ চাইলে অবশ্যই কাঁচা রসুন সেরা, কারণ অ্যালিসিন তখনই সবচেয়ে কার্যকর যখন আপনি তাজা কোয়াটি কাটেন বা ভেঙে ফেলেন। যদি আমি এমন কিছু তৈরি করি যেখানে রসুন মুখ্য—যেমন রসুনভরা পাস্তা বা রোস্টেড গার্লিক স্প্রেড—তাহলে আমি সবসময় কাঁচাই বেছে নিই।
অন্যদিকে, গুঁড়ো রসুনও রান্নাঘরে জায়গা পায় তার সুবিধার কারণে। এর গন্ধ তুলনামূলকভাবে কম তীব্র হলেও স্বাদের গভীরতা ঠিকই যোগ করে। আপনি এটি স্যুপ, স্টু বা ম্যারিনেডে সহজেই ছিটিয়ে দিতে পারেন—খোসা ছাড়ানো বা কাটা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই।
স্বাস্থ্য দৃষ্টিকোণ থেকে গুঁড়ো রসুনে কার্যকর উপাদান কিছুটা কমে যেতে পারে (শুকিয়ে ফেলার প্রক্রিয়ায়), তবুও ব্যস্ত দিনে এটি ভালো বিকল্প। আর সত্যি বলতে কী—সব সময় সেই কাগজ-প্যাঁচানো খোসা নিয়ে যুদ্ধ করার সময় আমাদের থাকে না, তাই না?
বিশেষ স্বাদ আর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যগুণ চাইলে কাঁচা রসুন ব্যবহার করুন, তবে সময় বাঁচাতে গুঁড়ো রসুন ব্যবহার করলেও দোষ নেই। যেটা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে, সেটাই বেছে নিন।
রসুন দিয়ে রান্না শুরু করতে চান? নিচে কিছু আইডিয়া রইল:
রোস্টেড গার্লিক স্প্রেড: রোস্ট করলে রসুনের তীব্রতা কমে গিয়ে তা নরম, ক্যারামেলাইজড পেস্টে রূপ নেয়—যা রুটি মাখাতে, ম্যাশড পটেটোতে মেশাতে বা স্যুপে ঘোলাতে ব্যবহার করা যায়। এক বাল্ব রসুন, একটু অলিভ অয়েল, আর সামান্য ধৈর্যই যথেষ্ট—ওভেনে রোস্ট করে সোনালি করে তুলুন। (সঠিকভাবে রোস্ট করার পদ্ধতি দেখে নিন।)*
গার্লিক বাটার পাস্তা: সেরা কমফোর্ট ফুড। একটু মাখন গলিয়ে কয়েক কোয়া কুচোনো রসুন দিন, সুন্দর গন্ধ এলে রান্না করা পাস্তা, পারমেজান চিজ আর সামান্য পার্সলে মিশিয়ে নিন। সোজা অথচ মজাদার একটা রেসিপি। *(২০ মিনিটে এই রেসিপিটি ট্রাই করুন।)*
গার্লিক স্টার-ফ্রাই: গরম ওকে বা স্কিলেটে রসুন কুচি দিয়ে দিন, তারপর আপনার পছন্দের সবজি, টফু বা চিকেন যোগ করুন। এই রসুনের স্বাদ পুরো রান্নাকে একত্র করে দেয়। *(চিলি গার্লিক ক্রিসপি টফুর রেসিপি দেখে নিন।)*
সালাদ ড্রেসিংয়ে কাঁচা রসুন: যদি একটু টক-ঝাল স্বাদ পছন্দ করেন, তাহলে সালাদ ড্রেসিংয়ে কাঁচা রসুন যোগ করা দারুণ কাজ করে। ছোট্ট একটি কাঁচা কোয়া ঘষে নিন (তীব্রতা বেশ বেশি!), আর তা অলিভ অয়েল, লেবুর রস ও সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। (লেমন গার্লিক ভিনিগারেট ড্রেসিং ট্রাই করুন।)
সকালের নাশতায় রসুন? হ্যাঁ!: রসুন শুধু দুপুর বা রাতের জন্য নয়। আমি মাঝে মাঝে রোস্টেড গার্লিক কোয়া ওমলেটে মেশাই বা ব্রেকফাস্ট পটেটোতে গুঁড়ো রসুন ছিটিয়ে দেই (চমৎকার রেসিপি আছে একটিতে)। এটা স্বাদের এক চমকপ্রদ পাল্টে দেওয়া—সকালে স্বাদগ্রন্থিগুলো জাগিয়ে তোলে। শুধু মনে রাখবেন, খাওয়ার পরে দাঁত ব্রাশ করে নিতে ভুলবেন না বা একটুখানি চুইংগাম চিবিয়ে নিন!
সবশেষে একটা কথা—যখনই কাঁচা রসুন ব্যবহার করবেন, ভালোভাবে কাটুন, চূর্ণ করুন বা কুচি করে নিন যাতে অ্যালিসিন সক্রিয় হয় এবং এর পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে খুব বেশি উচ্চ তাপে রান্না করবেন না, কারণ পুড়ে গেলে রসুনের স্বাদ তিক্ত হয়ে যায়—যেটা আপনি চাইবেন না।
মুমু