
ছবিঃ সংগৃহীত
চুল পড়া, রুক্ষতা বা আগা ফাটা—এই সমস্যাগুলি প্রায়ই আমাদের রোজকার জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। চুলের যত্নে নানা প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। কারণ, সুস্থ ও ঘন চুল পেতে শুধু বাইরের পরিচর্যা যথেষ্ট নয়, ভেতর থেকেও শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানো জরুরি। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুধ এবং দুধজাত খাবার চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, বায়োটিন, ভিটামিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট চুলের গোড়া মজবুত করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন ৫টি দুধজাত খাবার চুলের যত্নে আশ্চর্য উপকারে আসে—
১. দই: প্রোটিনে ভরপুর স্ক্যাল্পের শান্তিদাতা
দইয়ে থাকা প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত চুল সারাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা প্রোবায়োটিকস হজমশক্তি বাড়ায়, যা পরোক্ষভাবে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। স্ক্যাল্পে দই ব্যবহার করলে খুশকি ও চুলকানি কমে যায়।
ব্যবহার বিধি:
২ টেবিল চামচ দইয়ের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাস্ক বানান। মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
খাওয়ার উপায়: সকালের নাস্তায় বা স্মুদি হিসেবে দই খেলে চুলে প্রোটিন ও বায়োটিনের জোগান মেলে।
২. ঘি: প্রাচীন আয়ুর্বেদিক হেয়ার টনিক
ঘি-তে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন A, D, E। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়, স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলকে করে মজবুত ও ঘন।
ব্যবহার বিধি:
১ চামচ ঘি হালকা গরম করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। ১-২ ঘণ্টা অথবা সারা রাত রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
খাওয়ার উপায়: প্রতিদিন ভাত বা ডালের সঙ্গে ১ চামচ ঘি খেলে চুল ও ত্বকে উপকার মেলে।
৩. পনির: প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামে ঠাসা
পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, যা কেরাটিন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি চুল পড়া কমায় ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
ব্যবহার বিধি:
যদিও পনির সাধারণত টপিকালি ব্যবহৃত হয় না, তবে পনিরের পেস্ট ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানানো যায়।
খাওয়ার উপায়: গ্রিল করা পনির খিচুড়ি, সালাড বা র্যাপে খেলে চুলে প্রোটিনের জোগান বজায় থাকে।
৪. মালাই: প্রাকৃতিক হেয়ার কন্ডিশনার
দুধ ফোটানোর পর উপরের স্তরে যে ঘন চর্বিযুক্ত স্তর তৈরি হয়, সেটিই মালাই। এটি চুলকে গভীরভাবে আর্দ্রতা দেয়, রুক্ষতা কমায় ও চুলকে করে মসৃণ ও চকচকে।
ব্যবহার বিধি:
২ টেবিল চামচ মালাই-এর সঙ্গে ১ চা চামচ মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগান। ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
নোট: তেলতেলে স্ক্যাল্পে মালাই না লাগানোই ভালো।
৫. ছাঁনার জল (চাস/ওয়ে): হারিয়ে যাওয়া হেয়ার হিরো
পনির বা ছানা তৈরির পর যে জল বের হয়, সেটিই ওয়ে বা ছাঁনার জল। এতে থাকা প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড ও মিনারেল চুলের গোড়া মজবুত করে এবং ভলিউম বাড়ায়।
ব্যবহার বিধি:
শ্যাম্পুর পর ছাঁনার জল দিয়ে চুল ধুয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন, তারপর সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
খাওয়ার উপায়: দুপুরের পর এক গ্লাস ছাঁনার জল পান করলে হজম ও পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে, যা চুলের জন্য উপকারী।
দুধজাত খাবার শুধু শরীর নয়, চুলের জন্যও এক অব্যর্থ পুষ্টির উৎস। নিয়মিত ডায়েটে ও হেয়ার কেয়ারে এই উপাদানগুলি যুক্ত করলে প্রাকৃতিকভাবে চুলের স্বাস্থ্য ফেরানো সম্ভব। তবে এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, জলপান ও স্ট্রেসমুক্ত জীবনও চুলের সুস্থতায় সমানভাবে প্রয়োজন।
রিফাত