
ছবি: প্রতীকী
মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার। লিভার শরীরে কোনো ক্ষতিকর বস্তু থাকতে দেয় না। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যমে যদি কোনো বিষাক্ত পদার্থ শরীরে ঢুকে পড়ে তাহলে লিভার সেটাকে অপসারণ কর দেয়। এছাড়া মানবদেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় পদার্থ অ্যাল্বুমিন, তৈরি হয় লিভার থেকে।
লিভার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে না যখন এটি কোন ক্ষতিকর টিস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়। এমন এক সমস্যা হলো লিভার সিরোসিস। যা একটি নীরব ঘাতক।
লিভার সিরোসিস হলো লিভারের দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এই রোগে সুস্থ লিভার কোষ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং এর জায়গায় ক্ষতযুক্ত (স্কার) টিস্যু তৈরি হয়। এই ক্ষত ধীরে ধীরে পুরো লিভারের কাঠামো এবং কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। লিভার যখন এই ক্ষতযুক্ত টিস্যুর কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন শরীরের নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত___
আপনি যদি প্রায় সবসময় দুর্বলতায় ভোগেন, সহজে ক্লান্ত হয়ে যান, যদি দ্রুত ওজন কমে যায় এবং দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পরেও ক্ষুদাভাব না আসে, পেট ব্যথা বা পেট ফুলে থাকে, চোখ ও ত্বকে যদি হলুদ ভাব আসে, হাত-পা ফুলে যায়, বমিভাব বা বমি হয়, মনোযোগের অভাব, ঘুমের সমস্যা হয় তাহলে হতে পারে আপনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এই লক্ষণগুলো আপনার থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যারা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন___
যারা অতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত
লিভার মদ প্রক্রিয়া করে তা শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু নিয়মিত এবং অতিরিক্ত মদ্যপান করলে লিভারে চর্বি জমতে থাকে যা কোষ ধ্বংস করা শুরু করে। পরিশেষে লিভার সিরোসিসের রূপ ধারণ করে।
যারা হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত
এই দুটি ভাইরাস লিভারে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ঘটায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্ষতিকর টিস্যু তৈরি করে।
চর্বিযুক্ত লিভার
অনেকেই আছেন যারা মদ্যপান করেন না। কিন্তু তাদের লিভারেও চর্বি জমে লিভারে ক্ষতি হতে পারে। এটি সাধারণত স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল ইত্যাদির কারণে হয়।
বংশগত রোগ
অনেকেই বংশগতভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যাদের পূর্বপুরুষের মধ্যে কেউ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিল, তাদের মধ্য এই রোগ বংশানুক্রমে আসতে পারে।
ওষুধ ও বিষাক্ত পদার্থ
নিয়মিত বা অতিরিক্ত কিছু ওষুধ (যেমন পেইনকিলার, স্টেরয়েড) সেবন, লিভারে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।
লিভার সিরোসিস কীভাবে হয়____
১. প্রথম ধাপ: লিভারে চর্বি জমা ও প্রদাহ শুরু হয়।
২. দ্বিতীয় ধাপ: কোষ ধ্বংস হয়ে ক্ষতিকর টিস্যু তৈরি হয়।
৩. তৃতীয় ধাপ: লিভার ধীরে ধীরে সংকুচিত ও শক্ত হয়ে যায়।
৪. শেষ ধাপ: লিভার পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচতে করণীয়___
মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন
যারা ইতিমধ্যে লিভার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য মদ একেবারেই নিষিদ্ধ।
হেপাটাইটিস বি ও সি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন
সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করান এবং হেপাটাইটিস বি’র টিকা গ্রহণ করুন
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
কম চর্বিযুক্ত, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খান। বেশি পানি পান করুন। ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অতিরিক্ত ওজন থাকলে লিভারে চর্বি জমার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT), হেপাটাইটিস স্ক্রিনিং, আলট্রাসোনোগ্রাফি বা ফাইব্রোস্ক্যান করুন এবং সুস্থ থাকুন।
ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
অবশ্যই, যেকোনো ওষুধ, হারবাল ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
লিভার সিরোসিস একটি নীরব ঘাতক। অনেক সময় এটা বুঝতে সময় লেগে যায়, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া, নিয়মিত পরীক্ষা করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই পারে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে।
তথ্যসূত্র
https://www.facebook.com/reel/2078393899294855
সুরাইয়া