
ছবি: প্রতীকী
রোগবালাই যেমন আছে, তেমনি উপশমের উপায়ও আছে। এখানে ভুলে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. গোলাম মোস্তফা মিলন। স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ভিডিওতে ডা. গোলাম মোস্তফা মিলন বলেন, ভুলে যাওয়ার এই রোগটির নাম ডিমেনশিয়া, বাংলায় বলে ‘চিত্তভ্রংশ’। এটি ৬০ বা এর বেশি বয়সে শুরু হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর আগেও শুরু হতে পারে।
ডা. গোলাম মোস্তফা মিলনের আলোচনাটি নিচে তুলে ধরা হলো-
ডিমেনশিয়া রোগের শুরুতে একজন মানুষ অনেক পুরনো স্মৃতি, যেমন নিজের কোনো এক জন্মদিন পালনের কথা মনে রাখতে পারলেও, দৈনন্দিন বিষয়গুলো মনে রাখতে পারেন না। কিছুদিন পর সমস্যা আরও বাড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তি তখন অতীত এবং বর্তমানের অনেক কিছু ভুলে যান। এই ভুলে যাওয়ার বিষয়গুলো নিজে টের পান না, আশেপাশের মানুষজন বুঝতে পারেন।
ডিমেনশিয়া রোগে ভুলে যাওয়া ছাড়াও আরো অনেকগুলো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- যেসব দৈনন্দিন সাধারণ কাজ, যেগুলো আক্রান্ত ব্যক্তি পূর্বে ঠিকভাবে করতে পারতেন, ইদানীং পারছেন না। হতে পারে তা দোকান থেকে কিছু কিনে নিয়ে আসা বা টাকা-পয়সার হিসেব রাখা। এছাড়া, তাদের কথাবার্তা চালিয়ে যেতেও কষ্ট হয়, অনেক সময় শব্দের সঠিক প্রয়োগ করতে পারেন না। অনেক সময় আবার সময় এবং স্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেন না।
ডিমেনশিয়া কেন হয়?
অনেক কারণে এই রোগ হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ বা ব্রেন ক্ষয় হয়ে যাওয়া। যেমন- আলজাইমার রোগ (Alzheimer’s Disease)। এটি সবচেয়ে কমন।
এছাড়াও অনেক কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে। যেমন- কেউ যদি স্ট্রোক করেন, তাহলে পরবর্তীতে তার এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। মাথায় মারাত্মক আঘাত পাওয়ার কারণেও হতে পারে ডিমেনশিয়া। অনেক ইনফেকশনের কারণেও এটি হয়, যেমন- এইচআইভি, সিফিলিস।
আবার অনেক সময় ভিটামিনের অভাব থেকেও, যেমন- ভিটামিন বি-১২, ফলিক এসিড ইত্যাদির অভাবেও ডিমেনশিয়া হয়। ডিমেনশিয়া আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুখ। বিশেষ করে, লিভার ও কিডনির দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থেকেও ডিমেনশিয়া হতে পারে।
এছাড়া, ব্রেন টিউমার, অনেক বেশি রক্তশূন্যতা, অনেক হরমোনজনিত কারণেও এই রোগ হয়। আবার যাদের বংশে ডিমেনশিয়া রোগী আছেন, তাদেরও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকলেও ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
ডিমেনশিয়া ভালো হয় কিনা
সাধারণত এই রোগ দিন দিন বাড়তে থাকে। তবে কিছু কিছু ডিমেনশিয়া, যেমন- হরমোনজনিত কারণে, ব্রেন টিউমারের কারণে হলে, যেসব ডিমেনশিয়া থেকে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
এই রোগের চিকিৎসাকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম এবং প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে রোগীর ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুর যেমন যত্ন নিতে হয়, ঠিক সেভাবেই রোগীর যত্ন নিতে হবে।
আর এর চিকিৎসার দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে ওষুধ। তবে ওষুধ খেলে ডিমেনশিয়া পুরোপুরি ভালো হয় না, তবে রোগীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়, অসুখটি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়াও যদি রোগীর রাগ, সন্দেহপ্রবণতা, নিদ্রাহীনতা বা আচরণগত সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো অবশ্যই ওষুধ দিয়ে ঠিক করা সম্ভব।
সূত্র: https://www.facebook.com/share/v/1Kf8RH65Mv/
রাকিব