
ছবিঃ সংগৃহীত
লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis) ধীরে ধীরে হওয়া এক ধরনের লিভার ক্ষতি, যেখানে লিভারের সুস্থ টিস্যুগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং তার জায়গায় দাগ বা ফাইব্রোসিস তৈরি হয়। এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন উপসর্গ না থাকলেও কিছু লক্ষণ দেখে সন্দেহ করা যেতে পারে।
লিভার সিরোসিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
১. অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব (Chronic fatigue):
লিভার শরীরের টক্সিন পরিষ্কার করে এবং শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। সিরোসিসে এই কার্যক্ষমতা কমে যায়, ফলে সহজেই শরীর দুর্বল লাগে, ঘুম ঘুম ভাব হয়।
২. ক্ষুধামন্দা ও ওজন হ্রাস:
লিভারের অসুস্থতার কারণে হজমে সমস্যা হয়, ফলে ক্ষুধা কমে যায়। পাশাপাশি শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিতে না পারায় ওজন কমতে শুরু করে।
৩. পেটে পানি জমা (Ascites):
সিরোসিসে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে পেটের ভেতর ফ্লুইড জমে ফোলাভাব তৈরি হয়। এটি সিরোসিসের একটি প্রধান লক্ষণ।
৪. চোখ ও ত্বকে হলদে ভাব (জন্ডিস):
লিভার বিলিরুবিন নামক উপাদান প্রসেস করতে না পারলে তা রক্তে জমে যায়, ফলে ত্বক ও চোখ হলুদ দেখায়। এটি লিভার সমস্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
৫. হাত-পা ফোলা:
লিভার যখন প্রোটিন তৈরি কমিয়ে দেয়, তখন রক্তনালীতে চাপ বেড়ে যায় এবং শরীরের নিচের অংশে (বিশেষ করে পা ও পায়ের পাতা) পানি জমে ফোলা দেখা দেয়।
৬. ত্বকে চুলকানি:
লিভারের কারণে শরীরে পিত্তরস (bile salts) জমে যায়, যা ত্বকে চুলকানির সৃষ্টি করে।
৭. চামড়ায় জাল-আকৃতির দাগ (Spider angiomas):
ত্বকের নিচে ছোট রক্তনালীগুলো ফেটে গিয়ে লালচে জালের মতো দেখায়, বিশেষ করে বুকে ও মুখে। এটি হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়ে থাকে।
৮. পুরুষদের ক্ষেত্রে স্তনে বৃদ্ধি ও যৌন দুর্বলতা:
সিরোসিসে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে পুরুষদের ইস্ট্রোজেন বেড়ে যায়, ফলে স্তনের আকার বাড়তে পারে ও যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
৯. মস্তিষ্কে প্রভাব (Hepatic encephalopathy):
লিভার যদি রক্ত থেকে টক্সিন পরিষ্কার করতে না পারে, সেই টক্সিন মস্তিষ্কে পৌঁছে বিভ্রান্তি, ভুলভ্রান্তি, ঘুমঘুম ভাব এমনকি কোমার কারণ হতে পারে।
১০. পায়খানায় রক্ত বা কালো পায়খানা (GI bleeding):
সিরোসিসে খাদ্যনালির রক্তনালিগুলো ফুলে যায় (varices), যা ফেটে গিয়ে রক্তপাত করতে পারে। এটি পায়খানায় রক্ত বা কালো রঙ দেখা যাওয়ার কারণ।
রিফাত