
ছবি: প্রতিকী
কিডনি মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি দেহের রেচন তন্ত্রের প্রধান অংশ, যা দিন-রাত পরিশ্রম করে শরীরের বর্জ্য বের করে দেয়, পানির ভারসাম্য বজায় রাখে, এবং প্রয়োজনীয় খনিজ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অনেক সময়, আমরা নিজের অজান্তেই আমাদের কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করি — শুধুমাত্র খাবার দিয়ে নয়, বরং প্রতিদিনের পানীয়ের মাধ্যমেও।
বেশ কিছু পানীয় আছে যেগুলো দেখতে খুবই ভালো, কিন্তু প্রতিটি চুমুকেই কিডনির ক্ষতি করে। দীর্ঘ সময় ধরে এগুলো খেলে কিডনির ফিল্টারিং ইউনিটে চাপ পড়ে, যার প্রভাব পরে দেখা দেয় — যখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়।
চলুন জেনে নিই কোন কোন পানীয় কিডনির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর, এবং কী পান করলে কিডনি থাকবে সুস্থ।
১. কালো রঙের সফট ড্রিংক
ডার্ক সোডাগুলোতে থাকে উচ্চমাত্রার ফসফরিক অ্যাসিড, যা কিডনি স্টোন ও কিডনি ড্যামেজের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও এগুলোতে থাকে চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি উপাদান, যা কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়।
বিকল্প: কিউকমবার, পুদিনা বা লেবু দেওয়া ইনফিউজড পানি বা মাঝে মাঝে নারকেল পানি — যা কিডনির জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর।
২. বাজারজাত ফলের জুস
বহু ফলের জুসে প্রকৃত ফল থাকে খুব সামান্য, বাকি সবই কৃত্রিম সুগার, ফ্লেভার ও প্রিজারভেটিভ। এমনকি ‘নো অ্যাডেড সুগার’ লেখা জুসেও থাকে ক্ষতিকর মিষ্টি উপাদান।
বিকল্প: বাসায় তৈরি তাজা ফলের রস (চিনি ছাড়া) মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে, তবে সম্পূর্ণ ফল খাওয়াই কিডনির জন্য বেশি উপকারী।
৩. অ্যালকোহল
প্রতিদিন অ্যালকোহল পান করলে কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এটি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং কিডনি কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের সমস্যা হয় — যা কিডনির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।
বিকল্প: ধনিয়া বীজ, নেটল বা ড্যান্ডেলিয়ন জাতীয় হারবাল চা সকালে খেলে কিডনি ডিটক্সে সহায়তা করে।
৪. এনার্জি ড্রিংক
উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন, চিনি ও সিনথেটিক ভিটামিনসমৃদ্ধ এনার্জি ড্রিংক কিডনিকে মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত করে তোলে। এতে ডিহাইড্রেশন হয় ও কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়।
বিকল্প: সকালে এক কাপ ম্যাচা বা গ্রিন টি, অথবা হিমালয়ান লবণ মিশ্রিত পানি — যা প্রাকৃতিকভাবে শক্তি ও হাইড্রেশন দেয়।
৫. স্পোর্টস ড্রিংক
স্পোর্টস ড্রিংক সাধারণত শুধুমাত্র অতিরিক্ত ঘাম ঝরার পরে প্রয়োজনীয়। সাধারণ অবস্থায় এগুলোর উচ্চ সোডিয়াম, চিনি ও রং কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
বিকল্প: লেবু ও এক চিমটি প্রাকৃতিক লবণ মেশানো পানি — এটি ঘাম ঝরার পরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কেন কিডনি-বান্ধব পানীয় জরুরি?
সুস্থ কিডনির জন্য দরকার পরিচ্ছন্ন পানি, কম টক্সিন, আর একটি ব্যালেন্সড জীবনধারা। সঠিক পানীয় শরীর থেকে বর্জ্য দূর করে, ইনফ্ল্যামেশন কমায় এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে।
কখন সঠিক পানীয় গ্রহণ করবেন?
সকালে খালি পেটে লেবু পানি বা হারবাল ইনফিউশন সবচেয়ে উপকারী। সারা দিনে একটু একটু করে পানি পান করুন, হুট করে অনেক পানি খাওয়া কিডনিকে চাপ দেয়।
কিডনি দুর্বল হওয়ার লক্ষণ
- সবসময় ক্লান্তি
- চোখের নিচে ফোলা
- পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের ধরণ বদল (বারবার, কম পরিমাণ, ফেনা উঠা বা রঙ গাঢ়)
- মুখে দুর্গন্ধ বা ধাতব স্বাদ
- রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, খাওয়ার ইচ্ছে কমে যাওয়া ইত্যাদি।
কীভাবে কিডনি সুস্থ রাখবেন?
- পর্যাপ্ত পানি পান
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি পরিহার
- সুষম খাবার (ফল, সবজি, হোল গ্রেইন, মীন-মাংস)
- ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
- নিয়মিত শরীরচর্চা
- ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা
- রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
কিডনি-বান্ধব খাবার
ফল: বেরি, আপেল
সবজি: ফুলকপি, বেল পিপার
শস্য: ওটস, সাদা চাল
প্রোটিন: মাছ, মুরগি
ফ্যাট: অলিভ অয়েল
বেশি ফসফরাস (দুধ, লাল মাংস) ও পটাশিয়াম (কলা, পালং) খাবার পরিমিতভাবে খেতে হবে।
সাধারণ ভুল
- কম পানি পান করা
- অতিরিক্ত লবণ ও পেইনকিলার খাওয়া
- উচ্চ চিনি ও প্রোটিন ডায়েট
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অবহেলা করা
- অলস জীবনযাপন
- নিয়মিত চেকআপ না করা
কিডনির জন্য উপকারী যোগাসন
- পাসচিমোত্তানাসন (সীটেড ফরওয়ার্ড বেন্ড)
- অর্ধ মাত্রসেন্দ্রাসন (স্পাইনাল টুইস্ট)
- ভূজঙ্গাসন (কোবরা পোজ)
- সেতুবন্ধাসন (ব্রিজ পোজ)
এগুলো রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে কিডনিকে উদ্দীপিত করে।
কোন বাদাম উপকারী?
কম পটাশিয়াম ও ফসফরাস: ম্যাকাডেমিয়া, হ্যাজেলনাট, পাইন নাট, কুমড়ার বীজ
সতর্কতা: বাদাম, কাজু, ব্রাজিল নাট, পিস্তাচিও, চিনাবাদাম — এসব কিডনি রোগীদের জন্য সীমিত পরিমাণে গ্রহণযোগ্য।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/diet/5-worst-drinks-that-damage-the-kidneys-with-every-sip-we-take-what-should-we-drink-instead/photostory/120277131.cms
রবিউল হাসান