
ছবি: প্রতীকী
আমাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা আছে। এর মধ্য সবথেকে ক্ষতিকর বলতে হয় উচ্চ রক্তচাপকে। কেননা উচ্চ রক্তচাপ আগে থেকে বোঝা যায় না। আপনি যদি জেনে থাকেন আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং যদি এদিকে কর্ণপাত না করেন তাহলে দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনাকে ভোগাবে।
আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এই নিবন্ধটি আপনার জন্য।
উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি সমস্যা যেটা শুরুতে উপলব্ধি করা যায় না। যতদিনে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন, ততদিনে আপনার আরও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো ডাক্তাররা উচ্চ রক্তচাপের জন্য দিনে কমপক্ষে একটি করে কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কেন?
প্রকৃতি আমাদের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে। সব উপাদানের মধ্যে সর্বসেরা হলো কলা। আমেরিকান জার্নাল অব ফিজিওলজি- রেনাল ফিজিওলজি এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণ সোডিয়াম গ্রহণ করার পরেও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং কলা পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ একটি ফল।
কলার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এরমধ্যে বৈজ্ঞানিকভাবে দেওয়া পাঁচটি উপকারিতা নিয়ে এই নিবন্ধ।
পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ
কলা পটাশিয়াম ভরপুর একটি ফল। একটা কলায় প্রায় ৪০০- ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে যা আপনার দৈনন্দিন চাহিদার প্রায় ১০%।
আপনার মনে হতে পারে এর সাথে উচ্চ রক্তচাপের কী সম্পর্ক? পটাশিয়াম আপনার শরীরে সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমিয়ে দেয়। বেশিরভাগ মানুষই প্রক্রিয়াজাত দ্রব্য, স্ন্যাকস, এবং বাইরের খাবার গ্রহণ করার কারণে শরীরে সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে যায় যা দেহের অভ্যন্তরীণ পানিকে শুষে নেয় এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
পটাশিয়াম, এই বাড়তি সোডিয়ামগুলো ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করতে কিডনিকে সাহায্য করে। সুতরাং বেশি পটাশিয়াম= কম সোডিয়াম= নিম্ন রক্তচাপ। ডাক্তারের পরামর্শ, সকালের নাস্তায়, এক গ্লাস পানির সাথে একমুঠো বাদাম এবং একটি কলা আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দ্রবণীয় (সলিউবল) ফাইবার যা হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে
কলা শুধু পটাশিয়াম নয় দ্রবণীয় ফাইবারেও সমৃদ্ধ যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপকারী। দ্রবণীয় বা সলিউবল ফাইবার হলো সেগুলো যা পানিতে দ্রবীভূত হয়।
দ্রবণীয় ফাইবারগুলো এলডিএল বা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তনালীতে প্লাক (রক্তনালীর প্রাচীরে জমে থাকা শক্ত পদার্থ যা রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে) জমা হওয়া ধীরে ধীরে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কলায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সামান্য ধীর করে দেয় যা রক্তে থাকা শর্করা ও ইনসুলিনের স্তর স্থির রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার সকালের ওটসে একটি কলা টুকরো করে মিশিয়ে নিলে দ্বিগুণ ফাইবার গ্রহণ করতে পারবেন।
ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ
কলায় যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা রক্তনালিকে এবং উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালীর চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, রক্তনালীর প্রাচীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, হার্টবিট এবং নার্ভ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
একটি কলা আপনার ম্যাগনেসিয়ামের সম্পূর্ণ ডোজ পূরণ করতে পারবে না কিন্তু পাতাজাতীয় শাকসবজি, বীজজাতীয় খাবার এবং শস্যের সাথে গ্রহণ করলে উপকার হয়। এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম ভালো ঘুম এবং চাপ বা টেনশন কমাতেও কাজ করে।
শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে
আপনার গোড়ালি এবং পায়ের অংশে যদি ফোলাভাব অনুভূত হয় তাহলে এটা হতে পারে পানি জমার কারণে। যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাদের এমন পায়ে পানি জমতে দেখা যায়।
কলা শরীরের এই জমে থাকা পানি দুভাবে বের করে। এক, পটাশিয়াম শরীর থেকে সোডিয়াম বের করে দেয়। দুই, এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা কিডনির উপর মূত্রের চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী যারা মূত্রবর্ধক ওষুধ সেবন করেন, তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী। কলা শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া পটাশিয়াম, কোনোরকম বাড়তি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা
ছাড়াই পুনরায় ফিরিয়ে আনে।
কলাতে শর্করার পরিমাণ বেশি কি না
হ্যাঁ, কলাতে শর্করা আছে কিন্তু তার সাথে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ( শরীরের কোষগুলো ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে) থাকে যা প্রক্রিয়াজাত শর্করার তুলনায় ধীরে ধীরে হজম হয়। যদি না আপনাকে ডাক্তার অন্য কোন সমস্যার কারণে কলা না খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকে, তাহলে সারাদিনের জন্য একটি কলা খাওয়া উপকারী। যারা ডায়েট মেনে খাওয়া দাওয়া করেন তাদের জন্যেও।
আপনি যদি কম গ্লাইসেমিক (যা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাপ করে) প্রভাব চান, তাহলে একটি সবুজাভ বা কম পরিপক্ব কলা খেতে পারেন যা বেশি পেকে যাওয়া কলার শ্বেতসারের তুলনায় কম।
তথ্যসূত্র
টাইমস অব ইন্ডিয়া
সুরাইয়া