ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

তুলসি থেকে নিম: ৬টি শক্তিশালী ওষধি পাতার উপকারিতা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৯, ১৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৮, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

তুলসি থেকে নিম: ৬টি শক্তিশালী ওষধি  পাতার উপকারিতা

ছবি: সংগৃহীত

 

 

 

 

ভারতীয় উপমহাদেশ ভেষজ উদ্ভিদে পূর্ণ। সুগন্ধি তুলসি পাতা থেকে শুরু করে তেতো নিমপাতায় রয়েছে দারুন ঔষধিক্ষমতা। শুধু রান্নায় নয়, বহু পাতার রয়েছে অসাধারণ আরোগ্যক্ষমতা।

ভারতীয় সংস্কৃতিতেও ভেষজ পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, তুলসি ও নিমের মতো পাতাগুলিকে ‘পত্র দ্রব্য’ বলা হয়—এরা প্রাণশক্তি বা ‘প্রাণ’-এর বাহক হিসেবে কাজ করে এবং তিন দোষ—বাত, পিত্ত, কফ—এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এসব পাতা সিদ্ধ, পেস্ট, রস করে নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আসুন জেনে নিই ৬টি প্রাকৃতিক ওষুধি পাতার বিস্তারিত বিবরণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।

 

 

 

 

 

১. পান পাতা

পান পাতা চিবালে বদহজম ও পেট ফাঁপার সমস্যা কমে। এতে ইউজেনল ও কারভাক্রল নামক যৌগ রয়েছে, যা পেটের পেশি শিথিল করে এবং হজমে সহায়তা করে।

 

খাবারের পর পান পাতা চিবালে হজম এনজাইম নিঃসরণ বাড়ে, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং গ্যাস জমা হয় না। এটি মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ির সংক্রমণ ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক।

 

এছাড়াও, পান পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল অয়েল লিভার পরিষ্কারে সাহায্য করে এবং দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

 

২. পেয়ারা পাতা

পেয়ারা পাতা প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এক অমূল্য রত্ন। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।

 

এই পাতা হজমে সহায়তা করে, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা ও বদহজম দূর করে। পেয়ারা পাতার চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

 

এছাড়াও, এই পাতা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ত্বকের ব্রণ, দাগ ও জ্বালা কমাতেও কার্যকর।

৩. পুদিনা পাতা

শীতল ও সজীব এই পাতাটি বহু রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয় । এতে আছে ভিটামিন সি,  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মেনথল।

 

পুদিনা হজমে সাহায্য করে, পেট ঠান্ডা রাখে এবং বমি বা পেট খারাপ কমায়। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং ত্বকের ব্রণ, জ্বালা ও রোদে পোড়া কমাতে সহয়ক।

 

মেনথল শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা সর্দি-কাশির প্রতিকারে প্রাকৃতিক ডিকনজেস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে।

 

৪. কারি পাতা

দক্ষিণ ভারতীয় রান্নায় বহুল ব্যবহৃত এই পাতাটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

 

এই পাতা হজমশক্তি বাড়ায়, পেট পরিষ্কার রাখে এবং রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। চুল পড়া রোধ, আগাম পাকা চুল প্রতিরোধ এবং চুলের গোড়া মজবুত করতেও কার্যকর।

 

ত্বকের ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও সংক্রমণ নিরাময়ে কারি পাতা একটি প্রাকৃতিক সমাধান।

 

 

৫. নিম পাতা

নিম পাতাকে বলা হয় প্রাকৃতিক চিকিৎসার চাবিকাঠি। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও প্রদাহনাশক গুণ।

 

নিম রক্ত পরিশোধন করে, লিভার পরিষ্কার করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ব্রণ, একজিমা, সোরিয়াসিস ও অন্যান্য ত্বকজনিত রোগে উপকারী।

 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা পেটে পরজীবী সংক্রমণ প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। এছাড়া, নিম পেটের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে, যা হজম ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

 

 

৬. তুলসি পাতা

তুলসি পাতা বা পবিত্র বাসিল আয়ুর্বেদে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে।

 

তুলসি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সংক্রমণ রোধ করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি কাশি, সর্দি ও হাঁপানি উপশমে সহায়ক।

 

ত্বকের জন্য তুলসি দারুণ উপকারী- ব্রণ, ফুসকুড়ি ও দাগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে।

 

 

 

প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রাচীনকাল থেকেই এসব ভেষজ পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞানও ধীরে ধীরে এসব ভেষজ পাতার উপকারিতার স্বীকৃতি দিচ্ছে। প্রাত্যহিক জীবনে এসব পাতা ব্যবহার করে আপনি সহজেই শরীর ও মনের সুস্থতা বজায় রাখতে পারেন।

তবে অবশ্যই যে কোনও ভেষজ ব্যবহার শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অন্যথা, সেটা আপনার ক্ষতির কারণও হতে পারে।

আবুবকর

×