
সুস্থভাবে দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য বিজ্ঞানসম্মত কিছু অভ্যাস বহুদিন ধরেই অপরিবর্তিত রয়েছে—নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং অবশ্যই, সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
সম্প্রতি গবেষকরা এমন চারটি খাবারের কথা প্রকাশ করেছেন, যেগুলো নিয়মিত খেলে দীর্ঘজীবন লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।
এই চারটি খাবার নির্ধারণ করতে, স্পেনের গবেষকরা এমন দুটি ডায়েট পর্যালোচনা করেছেন, যেগুলো বিশ্বের ‘ব্লু জোন’ হিসেবে পরিচিত শহরগুলোর জীবনযাত্রার ভিত্তি—যেখানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই দুটি ডায়েট হলো: মেডিটেরিয়ান ডায়েট এবং প্ল্যানেটারি হেলথ ডায়েট।
দুই ডায়েটেই ফলমূল, শাকসবজি, শস্যদানা, ডাল এবং বাদাম বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। দুধ ও মাংসের পরিমাণ রাখা হয় সীমিত। প্ল্যানেটারি হেলথ ডায়েট, যা ২০১৯ সালে পরিবেশবান্ধব চিন্তা থেকে তৈরি, মাংসের চেয়ে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের (যেমন, মটরশুটি বা বিভিন্ন ধরনের ডাল) উপর বেশি জোর দেয়।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক, স্পেনের অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রিদের ডা. মার্সিডেস সোতোস প্রিয়েতো বলেন, “এই দুটি ডায়েট যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব, এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ও গ্রহ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
এই গবেষণায় প্রায় ১১,৫০০ জন অংশগ্রহণকারীকে ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে প্রায় ১৪ বছর পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষকরা চারটি খাবারের কথা বলেছেন, যেগুলো এই ডায়েটগুলোর মূল অংশ এবং দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত:
১. ফলমূল
ফলমূল মেডিটেরিয়ান এবং প্ল্যানেটারি হেলথ ডায়েট উভয়েরই প্রধান উপাদান। এতে ভিটামিন সি ও এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, প্রদাহ ও কোষ ক্ষয় কমায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে ফল খেলে মানসিক চাপ কমে।
মেডিটেরিয়ান ডায়েটে দিনে ২-৩ বারের ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, আর প্ল্যানেটারি হেলথ ডায়েট দিনে ৫ বারের বেশি ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
২. দুগ্ধজাত খাবার
যদিও এই দুটি ডায়েটে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ সীমিত, তবুও তা দীর্ঘজীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বিশেষ করে, কম চর্বিযুক্ত দই ও পনির (যেমন: লো-ফ্যাট গ্রিক ইয়োগার্ট বা কটেজ চিজ) ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, যা হাড় শক্ত করে।
এছাড়া, দুধজাত প্রোটিন বয়ঃজনিত পেশিশক্তি হ্রাস প্রতিরোধে সাহায্য করে। ৫ আউন্স ইয়োগার্টে প্রায় ১০-১৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও কেফিরের মতো ফারমেন্টেড দুগ্ধপণ্য হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
৩. আনস্যাচুরেটেড তেল
অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডো অয়েলের মতো আনস্যাচুরেটেড তেল এই ডায়েটের অন্যতম অংশ। এগুলো ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়, রক্তনালিকে সুস্থ রাখে এবং মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, অলিভ অয়েল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তনালির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৪. বাদাম
বাদাম স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে বহুদিন ধরেই জনপ্রিয়। এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ফাইবার ও ওমেগা-৩—যা হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। বিশেষ করে আখরোট।
মুমু