
সংগৃহীত
আমাদের দেহে প্রবাহমান রক্তকণিকা, স্নায়ুতন্তুর সুরক্ষামূলক আবরণ এবং কোষে গেঁথে থাকা জেনেটিক উপাদান.সবকিছুই নির্ভর করে এক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উপর, আর সেটি হলো ভিটামিন বি১২। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রায় ১২.৫ শতাংশ এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতিতে ভুগছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ব্যক্তিরা, নিরামিষ বা নিরামিষাশী খাদ্যাভ্যাস অনুসরণকারীরা এবং যাদের হজম সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ঘাটতি বেশি দেখা যায়। এই অবস্থায় অনেকেই ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ পান। তবে শুধু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেই চলবে না, এটি গ্রহণের সঠিক সময় জানাও সমান জরুরি। তাই পুষ্টিবিদদের পরামর্শে জেনে নিই, কখন বি১২ গ্রহণ করলে তা সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়।
ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্টের ধরন
ভিটামিন বি১২ চারটি ভিন্ন রূপে পাওয়া যায়,সায়ানোকোবালামিন, মিথাইলকোবালামিন, হাইড্রোক্সিকোবালামিন এবং অ্যাডিনোসাইলকোবালামিন।
সায়ানোকোবালামিন: সবচেয়ে প্রচলিত, সস্তা এবং স্থিতিশীল ধরনের বি১২। এটি সিন্থেটিকভাবে তৈরি হয় এবং শরীরে ব্যবহারের আগে সক্রিয় রূপে রূপান্তরিত হতে হয়।
মিথাইলকোবালামিন: প্রাণিজ উৎসে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং সরাসরি শরীর ব্যবহার করতে পারে।
হাইড্রোক্সিকোবালামিন: সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং দীর্ঘসময় রক্তে থাকতে পারে, গুরুতর ঘাটতি পূরণে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাডিনোসাইলকোবালামিন: কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াতে পাওয়া যায় এবং শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। তবে এটি কম পাওয়া যায় এবং গবেষণাও তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।
পুষ্টিবিদ ক্লার্ক বলেন, “সাপ্লিমেন্ট ও ইনজেকশন—দুটির মধ্য থেকে উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিতে হবে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ও ল্যাব রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে। যাদের বি১২ শোষণে সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে। আর বাকিদের জন্য ওরাল সাপ্লিমেন্টও কার্যকর এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচসাপেক্ষ।”
বাজারে বি১২ এর ট্যাবলেট, স্প্রে কিংবা জিভের নিচে রাখার ড্রপ,সবধরনের উপায়েই পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শোষণের দিক থেকে এসব পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই।
কখন ভিটামিন বি১২ গ্রহণ করবেন?
যদিও নির্দিষ্ট কোনো সময়কে “সর্বোত্তম” বলা কঠিন, তবে পুষ্টিবিদরা সাধারণত সকালে খালি পেটে বা নাস্তার আগে বি১২ গ্রহণের পরামর্শ দেন। পুষ্টিবিদ আলেক্সান্দ্রা ক্যাসপেরো জানান, “বি১২ গ্রহণের প্রায় সাত ঘণ্টা পর এর শোষণ সর্বোচ্চ হয়, তাই সকালবেলা এটি গ্রহণ করলে দিনের বাকি সময় শরীর এর উপকার পায়।”
বি১২ যেহেতু পানিতে দ্রবণীয়, শরীর এটি জমিয়ে রাখে না। তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, যেমন সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময়, এটি গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুললে তা সহজে মনে রাখা যায় এবং উপকারও মেলে।
বি১২ শোষণের সহায়ক ও প্রতিবন্ধক বিষয়গুলো
শোষণ বাড়ায় যেসব বিষয়:
ভিটামিন বি১২ শোষণে ‘ইনট্রিনসিক ফ্যাক্টর’ নামে পেটের একটি প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কারণে, একবারে খুব বেশি বি১২ শোষিত হয় না—মাত্র ১ মাইক্রোগ্রাম, যদিও ডোজ অনুযায়ী তা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। ফলে সাপ্লিমেন্টে স্বাভাবিক খাবারের তুলনায় বি১২-এর পরিমাণ বেশি দেওয়া হয়।
নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে দিনে অন্তত ২৫ মাইক্রোগ্রাম বি১২ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ থেকে ২৫০ মাইক্রোগ্রামে। অবশ্যই সঠিক মাত্রা নির্ধারণে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শোষণে ব্যাঘাত ঘটায় যেসব বিষয়:
পেটের অ্যাসিড ও ইনট্রিনসিক ফ্যাক্টরের ঘাটতি হলে বি১২ শোষণ ব্যাহত হয়। বয়স বাড়া, গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি, অ্যান্টাসিড বা মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ সেবন, পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া কিংবা সেলিয়াক, ক্রোন্স ও আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো হজমজনিত রোগ এসবের মধ্যে অন্যতম।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
ভিটামিন বি১২ সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ এবং সহজে সহনীয়। যেহেতু এটি পানিতে দ্রবণীয়, শরীর যা প্রয়োজন ব্যবহার করে বাকিটুকু প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এজন্য বড় ডোজেও এটি নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়।
তবে খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে ডায়রিয়া বা চুলকানির মতো বিরল প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। এছাড়া দিনে ১০০০ মাইক্রোগ্রাম বা তার বেশি গ্রহণ করলে ব্রণের মতো ত্বক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে কিছু রিপোর্টে জানা গেছে।
রক্তকণিকা গঠন, ডিএনএ সংশ্লেষণ ও স্নায়ু সুরক্ষায় ভিটামিন বি১২ অপরিহার্য। নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণকারী, বয়স্ক এবং হজমজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য বি১২ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এটি সকালে খালি পেটে নিয়মিত গ্রহণ করলে সবচেয়ে ভালো উপকার মেলে। তবে আপনার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী সঠিক মাত্রা ও ধরন নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdev8xsb
আফরোজা