ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

একা থাকার ৩ উপকারিতা, বলছে গবেষণা

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ১৪ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:১৭, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

একা থাকার ৩ উপকারিতা, বলছে গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

আমরা কি আসলে একা হয়ে যাচ্ছি, না কি আমরা নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাতে শিখছিসাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় একা কাটাচ্ছে এবং এটিকে তারা বলছেন একটি প্রকৃত একাকীত্ব মহামারী। কিছু থেরাপিস্ট এই সমস্যাকে এতটাই ব্যাপক মনে করছেন যে, তারা তাদের রোগীদের জন্য সামাজিক মেলামেশাকেই চিকিৎসা হিসেবে প্রেসক্রাইব করছেন।

তবে অনেকে মনে করেন, একাকীত্ব এবং নির্জনতার মধ্যে রয়েছে একটি বড় পার্থক্য। তাদের মতেএকাকীত্ব মানে হলো মন থেকে বিচ্ছিন্নতা শূন্যতার অনুভূতি, যেখানে আপনি অন্যদের সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন বোধ করেন। অন্যদিকে, নির্জনতা হতে পারে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, যা অনেক সময় মানসিক প্রশান্তি সৃজনশীলতার উৎসও হতে পারে। একাকীত্ব কেবল মানসিক অবস্থাই নয় বরং এটি শারীরিক সামাজিক সুস্থতার উপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সব সময় একা থাকা মানেই তা নেতিবাচক নয়অনেক সময় মানুষ নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে আত্মসচেতনতা বাড়ায়, সৃজনশীল হয় এবং মানসিকভাবে পুনরুজ্জীবিতও হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, একা থাকার অন্তত তিনটি বড় ধরনের উপকারিতা রয়েছে।

পুনরুজ্জীবিত হতে সময় দেয়

নিজের জন্য কিছু সময় বের করা কেবল বিশ্রাম নয়, এটি আপনাকে নতুন করে সতেজ শক্তি ফিরে পাওয়ার সুযোগ দেয়। পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজি বুলেটিন- প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫ মিনিট একা থাকলেই উদ্বেগের মতো তীব্র আবেগ কমে যায় এবং মন শান্ত হতে শুরু করে। এই মানসিক বিশ্রামের সময় আমাদের অস্থিরতা কমিয়ে মনকে আবার ভারসাম্য ফিরিয়ে দেয়, যার ফলে মানসিক স্বচ্ছতা আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং দৈনন্দিন চাপ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। শুধু শান্তির জন্য নয়, একা সময় কাটানো আমাদের সৃজনশীলতা কাজের ক্ষমতাও বাড়ায়। পাশাপাশি নিজের সঙ্গে একান্ত সময় আমাদের প্রতিভা কিংবা ভেতরের সম্ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

ব্যক্তিগত উন্নতির সুযোগ তৈরি করে

নির্জনতা কেবল নিঃশব্দ সময় নয়, বরং নিজেকে জানার এবং গড়ে তোলার একটি কার্যকর উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত একা সময় কাটান, তারা নিজেদের আরও স্বাধীন এবং আত্মবিশ্বাসী মনে করেন। ২০২৩ সালে সায়েন্টিফিক রিপোর্টস- প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে একা সময় কাটিয়েছেন, তারা তুলনামূলকভাবে কম চাপ অনুভব করেছেন এবং নিজেদের জীবনের ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে মনে করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধরনের একাকী সময় আত্মসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্যক্তিগত মূল্যবোধ লক্ষ্য ঠিক করতে সহায়ক হয়। তারা বলছেন, একা থাকার এমন মুহূর্ত আমাদের চিন্তা-ভাবনায় স্পষ্টতা আনে এবং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে।

অনুভূতি সৃজনশীলতার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে

নির্জনতা এমন এক মানসিক পরিসর তৈরি করে, যেখানে মানুষ নিজের অনুভূতিগুলো নিয়ে ভাবতে পারে এবং নতুন চিন্তা বা ধারণা তৈরি করতে পারে। ২০২১ সালে ফ্রান্সে ,২০০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৫ দিনের কঠোর কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় যারা সাধারণত খুব একটা সৃজনশীল ছিলেন না, তাদের মধ্যেও সৃজনশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একা সময় কাটানোর এমন অভিজ্ঞতা মানুষের চিন্তাশক্তি জাগিয়ে তোলে এবং সৃজনশীল ভাবনার বিকাশ ঘটায়, যা ব্যক্তিগত জীবন কাজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আরাফাত

×