
ছবি: সংগৃহীত
লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধন বা ডিটক্সিফিকেশনের কাজ করে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি এবং অব্যবস্থাপনার ফলে লিভার ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তা শরীরকে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে বিপদের বার্তা দিতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়েই এই সংকেতগুলো শনাক্ত করতে পারলে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে লিভারের কর্মক্ষমতা ফেরানো সম্ভব। নিচে উল্লেখ করা হলো এমন ৮টি সাধারণ লক্ষণ, যা ইঙ্গিত দেয় আপনার শরীর চাইছে আরও যত্ন, সঠিক খাবার এবং ব্যায়াম।
১. ঘুমিয়েও ক্লান্তি কাটছে না?
যথেষ্ট ঘুমানোর পরও যদি আপনি প্রতিনিয়ত ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটি লিভারের অতিরিক্ত চাপে থাকার লক্ষণ হতে পারে। ডিটক্সিফিকেশনের কাজ সঠিকভাবে না হলে শরীরে টক্সিন জমে ক্লান্তি সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীরচর্চা অত্যন্ত দরকার।
২. হঠাৎ ওজন বেড়ে যাচ্ছে?
লিভার যদি সঠিকভাবে চর্বি ভাঙতে না পারে, তাহলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। শুধুমাত্র ডায়েট করলেই সমাধান হবে না—লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
৩. গ্যাস, হজমে সমস্যা বা পেট ফাঁপা
নিয়মিত পেট ফাঁপা, গ্যাস বা হজমে সমস্যা থাকলে তা হতে পারে দুর্বল লিভারের ইঙ্গিত। সুস্থ লিভার হজমে সহায়তা করে, আর তাই সুষম খাদ্য ও ব্যায়াম এর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. ত্বকে ব্রণ বা র্যাশের উপদ্রব
ত্বকে যদি বারবার ব্রণ, র্যাশ বা চুলকানি দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে লিভার তার ডিটক্স কাজ ঠিকঠাক করতে পারছে না। রক্তে জমা টক্সিন ত্বকে প্রতিফলিত হয়। পানি পান, ঘাম ঝরানো ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস লিভারকে পুনরায় কার্যকর করতে সহায়তা করে।
৫. ঘন ঘন মাথাব্যথা হচ্ছে?
দেহে জমে থাকা টক্সিনের প্রভাবে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান, সবুজ শাকসবজি খাওয়া ও ব্যায়াম লিভারের উপর চাপ কমিয়ে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৬. মন খারাপ
যদি প্রায়ই মনমরা ভাব, রাগ বা অস্পষ্ট চিন্তা অনুভব করেন, তবে তা লিভারের সমস্যার প্রতিফলন হতে পারে। মানসিক স্বচ্ছতা ফেরাতে পরিষ্কার খাবার এবং ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।
৭. মুখে ও শরীরে দুর্গন্ধ
পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতার পরেও যদি মুখে বা শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসে, তা লিভারের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও ঘাম ঝরানোর অভ্যাস লিভারকে কার্যকর রাখে।
৮. চোখ বা ত্বকে হলুদ ভাব
চোখ বা ত্বকে যদি হলুদ ভাব দেখা যায়, তবে তা স্পষ্টভাবে জন্ডিসের লক্ষণ। এটি বোঝায় যে লিভার বিলিরুবিন ঠিকভাবে প্রসেস করতে পারছে না। এই লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা গেলে সেটিকে হালকাভাবে না নিয়ে অবিলম্বে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন এবং ব্যায়াম শুরু করুন। একটি সচল ও সুস্থ লিভার মানেই সুস্থ শরীর ও মনের নিশ্চয়তা। এখনই নিজের প্রতি যত্নবান হোন, কারণ সুস্থতা শুরু হয় সচেতনতা থেকে।
এম.কে.