
হজমের সমস্যা আজকাল প্রায় ঘরেই দেখা যায়। পেট ফোলা, গ্যাস্ট্রিক, অস্বস্তি-এসবের মূল কারণই অনেক সময় অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকা। কিন্তু সুখবর হলো, খুব সহজ কিছু প্রাকৃতিক পানীয় দিয়ে হজমশক্তি অনেকটা বাড়ানো যায়। বিশেষ করে ফারমেন্টেড বা গাঁজনকৃত পানীয়-যেগুলো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, মানে এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা আমাদের হজমে সহায়তা করে।
চলুন জেনে নিই এমনই ৮টি প্রাকৃতিক পানীয়, যেগুলো নিয়মিত পান করলে আপনার হজমব্যবস্থা হতে পারে আরও মজবুত ও স্বাস্থ্যকর।
১. কম্বুচা (Kombucha)
চায়ের মতো দেখতে এই পানীয়টি আসলে গাঁজন করা হয় সবুজ বা কালো চায়ের সঙ্গে চিনি ও SCOBY (ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের মিশ্রণ) দিয়ে। এতে প্রোবায়োটিক, ভিটামিন B ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে, গ্যাস্ট্রিক কমাতে ও হজম ভালো রাখতে সাহায্য করে।
২. কেফির (Kefir)
দুধ বা কখনো পানি দিয়েও তৈরি হয় কেফির। এটি এক ধরনের ফারমেন্টেড দুধ, যা দইয়ের চেয়েও বেশি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ। নিয়মিত কেফির খেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ঠিক থাকে, হজমশক্তি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
৩. কানজি (Kanji)
কানজি আমাদের উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী পানীয়। এটি মূলত কালো গাজর, সরিষা ও লবণ দিয়ে বানানো হয়। কিছুদিন রেখে দিলে এটি গাঁজে এবং এক ধরনের টক-মিষ্টি স্বাদ হয়। এটি হজমে খুব উপকারী, বিশেষত পেটের অস্বস্তি বা গ্যাসে।
৪. রাইস কানজি (Rice Kanji)
চাল ফারমেন্ট করে বানানো হয় এই পানীয়টি। এটি হালকা, পুষ্টিকর এবং দেহ ঠান্ডা রাখে। গ্রীষ্মকালে হজমের সমস্যা ও পানিশূন্যতা রোধে খুব কার্যকর।
৫. ক্ভাস (Kvass)
এই পানীয়টির উৎপত্তি রাশিয়ায়। এটি রুটি বা বিটরুট থেকে ফারমেন্ট করে বানানো হয়। এতে হালকা গ্যাস থাকে এবং এটি লিভার পরিষ্কার রাখতে ও হজম উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. মাটি দইয়ের পানি (Buttermilk)
দই থেকে তৈরি এই পানীয়টি আমাদের দেশে খুব পরিচিত। এতে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। খাবার পর এক গ্লাস মাটি দইয়ের পানি হজমে দারুণ সাহায্য করে।
৭. লাচ্ছি (Lassi)
দই, পানি ও সামান্য মিষ্টি বা লবণ দিয়ে তৈরি লাচ্ছি গ্রীষ্মের আদর্শ পানীয়। এটি পেট ঠান্ডা রাখে, হজম শক্তি বাড়ায় এবং পানিশূন্যতা দূর করে। বিশেষ করে ভারী খাবারের পর লাচ্ছি হজমে খুবই উপকারী।
৮. আদার সোডা (Ginger Bug Soda)
আদা, চিনি ও পানি দিয়ে কয়েকদিন রেখে গাঁজানো হয় এই পানীয়। এটি ঘরেই বানানো যায় এবং এতে প্রাকৃতিক কার্বনেশন থাকে। এটি শুধু হজমে সহায়তা করে না, বরং বমি বমি ভাব, গ্যাস ও পেটের অস্বস্তি কমাতেও সাহায্য করে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব প্রাকৃতিক ফারমেন্টেড পানীয় যোগ করলে অন্ত্র থাকবে সুস্থ, হজমশক্তি বাড়বে, আর আপনিও অনুভব করবেন হালকা ও প্রাণবন্ত। ওষুধের উপর নির্ভর না করে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ থাকার এটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ!
সূত্র:https://tinyurl.com/3yd3skcs
আফরোজা