
গ্রীষ্মকাল মানেই প্রচণ্ড রোদ, ঘাম আর ক্লান্তি। এই সময়টাতে শরীরের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন হয়, তা হলো পানি ও পুষ্টি। আর ঠিক তখনই প্রকৃতি যেন নিজেই পাঠায় এক অনন্য উপহার তরমুজ। এই রসালো, লাল টুকটুকে ফলটি শুধু স্বাদে মিষ্টি নয়, পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়।
চিকিৎসা ও পুষ্টিবিদদের মতে, তরমুজ নিয়মিত খাওয়া গেলে গ্রীষ্মকালীন নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। নিচে তরমুজের ৯টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপকারিতা তুলে ধরা হলো, যা প্রমাণ করে-তরমুজ গ্রীষ্মের সেরা ফল।
১. শরীরকে রাখে হাইড্রেটেড
তরমুজে রয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ পানি। ফলে এটি শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে দারুণ কার্যকর। গরমে যখন ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, তখন একটি ঠান্ডা তরমুজের টুকরো দেহে দ্রুত জলীয় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
২. ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে সহায়ক
তরমুজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, যা শরীরের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন হলো একধরনের প্রোটিন, যা ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। নিয়মিত তরমুজ খেলে ত্বক হয় মসৃণ ও উজ্জ্বল, চুলও থাকে মজবুত ও প্রাণবন্ত।
৩. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
তরমুজে থাকা L-citrulline নামক একটি প্রাকৃতিক অ্যামিনো অ্যাসিড রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে, ফলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৪. হজমে সহায়ক
তরমুজে বিদ্যমান প্রাকৃতিক আঁশ এবং পানি হজমের প্রক্রিয়া সহজ করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে এবং হজমের পরে পেটে হালকা ও আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
৫. ত্বকের যত্নে কার্যকর
তরমুজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ও সি সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এটি রোদে পোড়া দাগ হালকা করে এবং ব্রণ বা অ্যালার্জি কমাতেও সহায়ক।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
তরমুজে ক্যালোরি কম, কিন্তু এতে থাকা প্রাকৃতিক পানি ও আঁশ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য তরমুজ হতে পারে স্বাস্থ্যকর একটি স্ন্যাকস।
৭. চোখের স্বাস্থ্যে উপকারী
তরমুজে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সহায়ক। এটি রেটিনার স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৮. প্রদাহ কমায়
তরমুজে লাইকোপিন এবং Cucurbitacin E নামক উপাদান থাকে, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত সমস্যায় উপকার দেয়।
৯. কিডনির যত্নে সহায়ক
তরমুজ একটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক, অর্থাৎ এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন ও লবণ বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তরমুজ শুধু একটি সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন ফল নয়, এটি একটি পুষ্টিকর ও চিকিৎসাগতভাবে উপকারী ফল। রোজকার খাদ্যতালিকায় তরমুজ রাখলে গরমে ক্লান্তি দূর হয়, দেহে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে এবং শরীর ভেতর থেকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকে।
সূত্র:https://tinyurl.com/4tmr6e5e
আফরোজা