ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

বদহজম হলে চিকিৎসা কী

ডা. এ বি এম শাকিল গনি

প্রকাশিত: ২১:১২, ৭ এপ্রিল ২০২৫

বদহজম হলে চিকিৎসা কী

পেটের সমস্যায় ভোগেন

এক মাসের দীর্ঘ সিয়াম শেষে শুরু হলো লম্বা ছুটির উৎসব। আর দীর্ঘ সংযমের পরে স্বভাবতই উৎসবের সময়টাতে আমাদের প্রত্যেকের ভালো-মন্দ কিছু খেতে ইচ্ছা করে তা নিজের বাড়ি হোক আর আত্মীয়র বাড়ি হোক আর এই ইচ্ছেটাও কখনো কখনো কাল হয়ে দাঁড়ায় আমাদের শরীরের জন্য, পেটের জন্য।

সিয়াম পালনকারী মুসলিমদের একটা বড় অংশই পরিবর্তন আসা সময়ে নানা রকম পেটের সমস্যায় ভোগেন। বদহজম, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা কিংবা বমি, সঙ্গে কারো কারো গ্যাসের সমস্যার কারণে পেটের অস্বস্তিতে কষ্ট পান। সেসব কিছু সমস্যা থেকে মুক্তি এবং প্রতিরোধ নিয়ে আজকের আলোচনা।
সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নিচের নিয়মসমূহ পালন করতে চেষ্টা করতে পারেন:
এ সময়টাতে অল্প অল্প করে খাবার খান, একেবারে পেট ভরে খাবেন না।
দুধ জাতীয় খাবার, কফি, গুরুপাক খাবারগুলো যতটুকু পারবেন এড়িয়ে চলুন।
পানি এক বা দুই গ্লাস করে সারাদিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস (অসুস্থতার কারণে পানি খেতে বারন না থাকলে) খাবেন।
রিক্সা বা গাড়ি ব্যবহার না করে একটু হাঁটার চেষ্টা করুন।
খাবারের মাঝে একটু বিরতি দিন।
এরপরও অনেক চেষ্টার পরেও আমরা নানা সমস্যায় ভুগী। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বদহজম।
বদহজম বা গন্ধ ঢেঁকুর হলে হাতের কাছে Syp. Pink Bismol বা Syp. Peptocid রাখতে পারেন। চার থেকে ছয় চা চামচ আধা ঘণ্টা পর পর সমস্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে। তবে অবশ্যই সারাদিনে ৮ বারের বেশি খাওয়া যাবে না। আর এটা খেলে পায়খানা কালো হতে পারে, ভয় পাবেন না। আপনার নিয়মিত কোন ওষুধ থাকলে সেটা খাবেন এই ওষুধ খাওয়ার দু ঘণ্টা পরে।
ববি ভাব বা বমি হলে Tab. Emistat জাতীয় বমির ওষুধ খেতে পারেন। প্রতিবার বমির জন্য দুই গ্লাস করে ওরস্যালাইন খাবার চেষ্টা করুন। আগে বমির ওষুধ খেতে হবে, এর আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিট পরে ওরস্যালাইন খাওয়া শুরু করবেন।
হালকা পেটব্যথা থাকলে Tab. Timoyin জাতীয় এন্টিস্পাসমোডিক ওষুধ কাজে লাগতে পারে।
পাতলা পায়খানা হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি জাতীয় খাবার খেলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে যাবেন। এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নাই। প্রতিবার পাতলা পায়খানার জন্য দুই গ্লাস করে ওরস্যালাইন খাবেন। এ সময় সহজপাচ্য খাবার গুলো খাবার চেষ্টা করুন, যেমন জাউভাত, চিড়া, কলা ইত্যাদি।
যারা ওরস্যালাইন খেতে পারেন না তারা ডাবের পানি, বাসার তৈরি লবণ চিনির শরবত, বাজারে কিছু স্পোর্টস ড্রিঙ্কস পাওয়া যায় সেগুলো কিংবা ঝগঈ প্লাস ইলেক্ট্রলাইট ড্রিঙ্কস খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিবার পায়খানা বা বমির জন্য ৫০০সষ বা দুই গ্লাস খেতে হবে।
খাবার পরে যাদের পেট ফুলে যাচ্ছে বা গ্যাস হচ্ছে মনে হচ্ছে তারা উপসর্গ হলেই ঝুঢ়. এধারষধপ গ, চার চামচ করে খেয়ে নিবেন। দিনে চারবার পর্যন্ত এটা খেতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, এটা খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
তীব্র পেট ব্যথা, জ্বর, দুর্বলতা, পেট অত্যধিক ফুলে যাওয়া, শরীর ব্যথা কিংবা শরীরে লবণের ঘাটতি দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
সংযমের মাস শেষে অসংযমিক খাবারদাবার আমাদের কষ্টের কারণ, বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এ দিনটা একটু সাবধানে চলতে পারলে আমরা ঈদের লম্বা ছুটিতে খুশিটা আনন্দের সঙ্গেই পার করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
চেম্বার : অধ্যাপক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও লিভার বিভাগ।
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ (৫ম তলা) ‘শ্যামলী শাখা’ ইউনিট-২
(শহীদ সোহ্ওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীতে)
প্রয়োজনে: ০৯৬৬৬-৭৮৭৮০৬

×