
সংগৃহীত
মাথাব্যথা নিয়ে কেউ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে, তার ব্যথার প্রকৃত কারণ এবং রোগ নির্ধারণ সবসময় সহজে বোঝা যায় না। কারণ, মাথাব্যথা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং অনেক সময় তা মারাত্মক কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিতও দিতে পারে। তাই রোগীকে পর্যবেক্ষণের সময় কিছু ‘লাল সংকেত’ বা Red Flags খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক না গৌণ,ভিন্নতা কোথায়?
মাথাব্যথাকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়: প্রাইমারি (প্রাথমিক) এবং সেকেন্ডারি (গৌণ)।
প্রাইমারি হেডেকের মধ্যে পড়ে মাইগ্রেন বা টেনশন হেডেক, যেগুলো মস্তিষ্কের ব্যথাসংবেদনশীল অংশের অতিসক্রিয়তার কারণে হয়। এই ধরনের মাথাব্যথার পেছনে বড় কোনো শারীরিক রোগ থাকে না।
অন্যদিকে, সেকেন্ডারি হেডেক হয়ে থাকে কোনো অন্তর্নিহিত রোগ বা জটিলতার কারণে। যেমন—মস্তিষ্কে টিউমার, রক্ত জমাট, স্ট্রোক, মস্তিষ্কে চাপের তারতম্য বা বিষাক্ত উপাদানের সংস্পর্শ।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রেবেকা মাইকেল বলেন—
“যদি মাথাব্যথার কারণ হয় কোনো টিউমার বা রক্ত জমাট, তাহলে তা সময়মতো শনাক্ত না হলে রোগীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই এ ধরনের লক্ষণ থাকলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আর যদি সেকেন্ডারি হেডেকের কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে আমরা রোগীকে আশ্বস্ত করে প্রাইমারি হেডেক অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে পারি।”
সেকেন্ডারি হেডেক শনাক্তে চিকিৎসকেরা “SNOOP4” নামক একটি মেমোনিক ব্যবহার করেন, যা বিভিন্ন সতর্কবার্তাকে নির্দেশ করে:
S – Systemic signs (শরীরজুড়ে উপসর্গ)
জ্বর, রাতের ঘাম, ওজন কমে যাওয়া বা শরীরের অন্য কোনো সংক্রমণ ইঙ্গিত দিতে পারে শরীরজুড়ে কোনো রোগ প্রক্রিয়ার। যদি রোগীর আগে থেকেই ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকে, তাহলে সেকেন্ডারি হেডেক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
N – Neurological symptoms (স্নায়বিক লক্ষণ)
যদি রোগীর হাতে বা পায়ে দুর্বলতা, নতুন কোনো অসাড়তা বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা যায়, তাহলে সেটি প্রাইমারি হেডেক নয়। এই লক্ষণগুলো সেকেন্ডারি হেডেকের ইঙ্গিত হতে পারে।
O – Onset is sudden (অচিরেই শুরু হওয়া)
“থান্ডারক্ল্যাপ” হেডেকের মতো হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা (যা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ১০-এ-১০ স্কোরে পৌঁছে যায়) অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি এনিউরিজম বা রক্তনালির সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
O – Older age (অবসরের পর নতুন মাথাব্যথা)
যদি কারো ৫০ বছর বয়সে এসে নতুনভাবে মাথাব্যথা শুরু হয়, তাহলে সেটি প্রাইমারি হেডেক হওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে অন্তর্নিহিত অন্য কোনো রোগের উপস্থিতি খুঁজে দেখা জরুরি।
P – Progression (ক্রমবর্ধমান ব্যথা)
সেকেন্ডারি হেডেক সাধারণত সময়ের সাথে সাথে তীব্রতর বা ঘন ঘন হতে থাকে। প্রাইমারি হেডেক সাধারণত মাঝে মাঝে বা নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে থাকে।
P – Papilledema (অপটিক নার্ভের ফোলাভাব)
চোখের ফান্ডোস্কোপি পরীক্ষায় যদি অপটিক নার্ভে ফোলাভাব দেখা যায়, তাহলে এটি মস্তিষ্কে চাপ বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়, যা একটি বড় সতর্কবার্তা।
P – Positional changes or Valsalva-induced (অবস্থান পরিবর্তনে বা কাশি, চাপ প্রয়োগে ব্যথা বাড়ে)
যদি মাথাব্যথা দাঁড়ানো থেকে শোয়াতে বা কাশি ও চাপ প্রয়োগে বেড়ে যায়, তাহলে সেটি কোনো চাপজনিত বা ভলিউম সংক্রান্ত সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
P – Pregnancy (গর্ভাবস্থা)
গর্ভাবস্থা চলাকালীন বা পরবর্তী সময়ে যদি নতুন মাথাব্যথা শুরু হয়, তাহলে পিটুইটারি বা রক্তনালির সমস্যার সম্ভাবনা খুঁজে দেখা উচিত।
কখন স্ক্যান বা টেস্ট করানো দরকার?
সাধারণ নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি কিছু ল্যাব টেস্ট বা ইমেজিং করা দরকার হতে পারে সেকেন্ডারি মাথাব্যথার কারণ খুঁজে বের করার জন্য।সিস্টেমিক লক্ষণ থাকলে থাইরয়েড, রক্তশূন্যতা, অটোইমিউন রোগ বা সংক্রমণ যাচাই করতে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়।
ESR বা CRP পরীক্ষা করে টেম্পোরাল আর্টেরাইটিস বা জায়ান্ট সেল আর্টেরাইটিস ধরা যেতে পারে, যা সাধারণত একপাশে ব্যথার মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যদিও অনেক সময় পেছনে বা কপালের দিকেও ব্যথা হতে পারে।
ডা. মাইকেল বলেন-“যদি কেউ হঠাৎ করে খুব তীব্র মাথাব্যথা নিয়ে আসেন, তখন সিটি স্ক্যান অথবা জরুরি বিভাগে পাঠানোই শ্রেয়।”
সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হলো—MRI
এমআরআই দ্বারা সংক্রমণ, ছোট টিউমার, চাপ পরিবর্তন কিংবা পিটুইটারি সমস্যা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যদি ইমেজিং বা পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট কিছু ধরা না পড়ে, তাহলে নিউরোলজিস্টের কাছে রেফার করাই উত্তম।
সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। কিছু মাথাব্যথা হতে পারে প্রাণঘাতী রোগের ইঙ্গিত। তাই সময়মতো সতর্কতা চিহ্নিত করে সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ধারণ করা এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র:https://tinyurl.com/yztexh34
আফরোজা