
লন্ডনের বিজ্ঞানীরা জানালেন, মৃগীরোগ শনাক্তে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন। তাঁদের তৈরি এমইএলডি গ্রাফ (বা মেল্ড গ্রাফ) নামের এআই টুলটি মস্তিষ্কের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষুদ্র সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে সক্ষম বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ক্ষুদ্র সমস্যাগুলোই মৃগীরোগের কারণ।
এমইএলডি বা মেল্ড গ্রাফ টুলটি মস্তিষ্কের এমন ক্ষুদ্র সমস্যাও শনাক্ত করতে পারে যেটা প্রচলিত পদ্ধতিতে একজন রেডিওলজিস্টের পক্ষে খালি চোখে করা প্রায় অসম্ভব।
কিংস কলেজ লন্ডনের স্কুল অব বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইমেজিং সায়েন্সের সিনিয়র লেকচারার ডঃ কনরাড ওয়াগস্টাইল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘একটি এমআরআই স্ক্যানে সম্ভবত ১০ মিলিয়ন পিক্সেল থাকে, আর তাঁরা সেখানে হয়তো ১০০ পিক্সেলের মতো কিছু খুঁজছেন।’
মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা কতটা চ্যালেঞ্জের তা বোঝাতে ওয়াগস্টাইল একটি উদাহরণের অবতারণা করেছেন। তিনি বলেন, ২০০ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাসে ১ লাখ শব্দের মধ্য থেকে কিছুটা ভিন্ন ফন্ট বা সাইজের একটি শব্দকে খুঁজে বের করা যতটা কঠিন, ঠিক ততটাই কষ্টসাধ্য মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যা বা অস্বাভাবিকতাগুলো শনাক্ত করা।
মানুষের সীমাবদ্ধতা যাতে মৃগীরোগ শনাক্তে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যেই বিজ্ঞানীরা ১০ বছরের গবেষণায় তৈরি করেছেন এমইএলডি বা মেল্ড গ্রাফ নামের এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক টুলটি। ফোকাল কর্টিক্যাল ডিসপ্লাসিয়া (এফসিডি) সমস্যায় আক্রান্ত ৭০০ জনেরও বেশি মানুষের এমআরআই ডেটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এই এআই টুলটিকে।
উল্লেখ্য, ফোকাল কর্টিক্যাল ডিসপ্লাসিয়া বা এফসিডি হচ্ছে মৃগীরোগের অন্যতম বড় কারণ। এফসিডি অতি ক্ষুদ্র হতে পারে, যা মানুষের পক্ষে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। সাধারণভাবে দেখা গেছে, এই ক্ষতগুলোর প্রায় অর্ধেক রেডিওলজিস্টরা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। ফলে প্রায় অর্ধেক মৃগীরোগীই রোগ শনাক্ত না হওয়ার কারণে চিকিৎসার বাইরে থেকে যান।
এমইএলডি বা মেল্ড গ্রাফ সিস্টেমটি মস্তিষ্কের যেকোনো বিষয় স্বাভাবিক মনে না হলে তা সে চিহ্নিত করে এবং কেন বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তার একটি ব্যাখ্যাও দেয়। এরপর সিস্টেম প্রদত্ত বিশ্লেষণটি একজন রেডিওলজিস্ট পরীক্ষা করেন। এভাবে রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা যাবে আরও নির্ভুলভাবে ও দ্রুততার সাথে।
ওয়াগস্টাইল বলেন, 'আপনি যদি মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান, তাহলে আপনি রোগীকে অস্ত্রোপচারের কথা বলতে পারেন, যেটা খিঁচুনি নিরাময় করতে পারে। আমাদের এআই টুলটি এই অস্বাভাবিকতাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ শনাক্ত করতে পারে, যা ডাক্তারদের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। এটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর অর্থ হলো, আরও বেশি সংখ্যক শিশু সম্ভাব্য সেরা চিকিৎসা পেতে পারে।’
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১ জন মৃগীরোগে আক্রান্ত, এবং প্রতি ৫ জন মৃগীরোগীর মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হন মস্তিষ্কের কাঠামোগত সমস্যা বা অস্বাভাবিকতার কারণে।
সূত্র: রয়টার্স
ফুয়াদ