ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

ধুমপান ছাড়াই বাড়ছে ফুসফুস ক্যানসার! যা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২৯ মার্চ ২০২৫

ধুমপান ছাড়াই বাড়ছে ফুসফুস ক্যানসার! যা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যান্সার ছিল সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার, যা মোট নতুন ক্যান্সার শনাক্তকরণের ১২.৪%। ভারতে এটি চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত ক্যান্সার (৫.৮%) এবং ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ (৮.৭%)।

ধূমপান ছাড়াও রয়েছে ঝুঁকি প্রথাগতভাবে ফুসফুসের ক্যান্সারকে ধূমপানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলেও, বিশ্বব্যাপী ও ভারতীয় পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ধূমপান না করেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) ‘নেভার-স্মোকার’ বা ‘নন-স্মোকার’ বলতে তাদের বোঝায়, যারা আজীবন ১০০টির কম সিগারেট খেয়েছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারকে LCINS বলা হয়।

কেন বাড়ছে অধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার?

🔹 বয়স ও বংশগত প্রভাব: সাধারণত বেশি বয়সে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, তবে ৫০ বছরের কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া, পরিবারের নিকটাত্মীয়ের (বিশেষত ৫০ বছরের কম বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্তদের) ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে LCINS হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

🔹 পরিবেশগত দূষণ: অ্যাসবেস্টস, ক্রোমিয়াম, রেডন ও আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা LCINS-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি। রেডন গ্যাস, যা ইউরেনিয়ামের ক্ষয়প্রাপ্ত উপাদান, মাটিতে, পাথরে ও পানিতে পাওয়া যেতে পারে।

🔹 বায়ু দূষণ ও প্যাসিভ স্মোকিং: ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ঘরের ভেতরে জ্বালানির ধোঁয়া ও বাতাসে সূক্ষ্ম কণা (PM2.5) ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, PM2.5-এর দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং এটি বিশেষভাবে EGFR-মিউটেশনযুক্ত লাং ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়া, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২০-২৫% বাড়তে পারে।

কিভাবে রক্ষা পাবেন?

✅ ধূমপান থেকে বিরত থাকুন

✅ পরোক্ষ ধূমপানের ধোঁয়া, ডিজেল এক্সহস্ট ও অন্যান্য বায়ু দূষণ থেকে দূরে থাকুন

✅ বাড়িতে রেডন গ্যাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করুন

✅ অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, সিলিকা ও ক্রোমিয়ামের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন

LCINS চিকিৎসা ও স্ক্রিনিং LCINS-এ অ্যাডেনোকার্সিনোমা বেশি দেখা যায় এবং এতে EGFR মিউটেশনের মতো লক্ষ্যযোগ্য জিনগত পরিবর্তন বেশি থাকে। তবে, এটি ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সারের তুলনায় PD-L1 কম থাকায় ইমিউনোথেরাপির কার্যকারিতা তুলনামূলক কম।

বর্তমানে অধূমপায়ীদের জন্য ফুসফুসের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সুপারিশ করা হয় না। তবে, তাইওয়ানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য লো-ডোজ সিটি স্ক্যান (LDCT) কার্যকর হতে পারে।

✅ ধূমপায়ীদের তুলনায় অধূমপায়ীদের মধ্যে অ্যাডেনোকার্সিনোমার হার বেশি

✅ পারিবারিক ইতিহাস, বয়স ও পরিবেশগত দূষণ LCINS-এর প্রধান ঝুঁকির কারণ

✅ বায়ু দূষণ ও পরোক্ষ ধূমপানের মতো এড়িয়ে চলা LCINS প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে

আসিফ

×