
ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তবতা কি তা বলে? একজন তারকা যখন অসুস্থ হন, তখন তার চিকিৎসা চলে বুলেট গতিতে, আর একজন সাধারণ নাগরিক যখন জীবন-মরণ সংকটে পড়েন, তখন তাকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। এই বৈষম্য কেন? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
একজন তামিম ইকবাল যখন বুকের ব্যথা অনুভব করেন, তখন চিকিৎসা চলে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মতো। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে এনজিওগ্রাম করা হয়। হার্টে ব্লক শনাক্ত করা হয়।রিং বসানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এত দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে কারণ তিনি দেশের গর্ব, একজন তারকা। তার প্রাণ বাঁচাতে কোনো সময় নষ্ট হয়নি। হাসপাতাল তাকে সেবা দিয়েছে—এটি তার প্রতি দয়া নয়, বরং তাদের দায়িত্ব।
কিন্তু যদি কোনো সাধারণ মানুষ বুকের ব্যথায় ভোগেন, তখন কী হয়? তখন তাকে অপেক্ষা করতে হয়, দীর্ঘ সিরিয়াল। জরুরি অবস্থা হলেও অপেক্ষার শেষ নেই। ভর্তি ফরমের জটিলতা। চিকিৎসা নয়, বরং ফরম পূরণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হয়। অ্যানালাইসিস ফি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা— যার ফলে অনেকেই চিকিৎসা নিতে পারেন না। হাসপাতালের ঠান্ডা করিডোরে অসহায়ের মতো বসে থাকা— হয়তো শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই জীবনটাই থেমে যায়।
তারপর? পরদিন পত্রিকার পাতায় একটি ছোট্ট শোকবার্তা, “ভালো চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু” এটাই কি সাধারণ মানুষের পরিণতি? একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি কি শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত বা তারকাদের জন্য? একজন সাধারণ মানুষ কি শুধুমাত্র টাকার অভাবে বাঁচার অধিকার হারাবে?
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং দক্ষ জনবল নেই। প্রাইভেট হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা মিললেও, খরচ এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বহন করা অসম্ভব। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার অভাব সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগকে সীমিত করে রাখে।
স্বাস্থ্যসেবা শুধুমাত্র ধনী, ক্ষমতাবান বা তারকাদের জন্য নয়, এটি সকল মানুষের অধিকার। উন্নত দেশগুলোতে সাধারণ নাগরিক এবং তারকার চিকিৎসায় কোনো পার্থক্য থাকে না। আমাদের দেশেও সেই পরিবর্তন আনতে হবে।
ফারুক