
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইলে সারাক্ষণ স্ক্রল করে ‘রিল’ দেখার অভ্যাস বা ডুম-স্ক্রলিংয়ের নেশা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। এই অভ্যাস একদিকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) সৃষ্টি করছে, তেমনই হৃদ্রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বর্তমান প্রজন্ম এখন মোবাইলের স্ক্রিনে মগ্ন। খাওয়া, ঘুমানোর সময় বা সফরের সময়ও প্রায় সবারই ‘রিল’ বা ভিডিও দেখার অভ্যাস রয়েছে, শিশুরাও এর বাইরে নয়। তবে এই অভ্যাসের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় জানা গেছে, মোবাইলের স্ক্রিনে একটানা চোখ রেখে ‘রিল’ দেখা বা ভিডিও গেম খেলার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়ে। স্ক্রিনের দিকে চোখ রাখার ফলে উত্তেজনা বেড়ে গিয়ে হৃদ্স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, যা মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এই হরমোনটি ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত, ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এর প্রভাবে শরীর ও মনের উপর চাপও পড়ে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যারা টানা ৩-৪ ঘণ্টা মোবাইলে ‘রিল’ বা ভিডিও দেখেন, তাঁদের হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। যারা ৪ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। ১৯৯৮ সালে একটি জার্মান গবেষণায়ও দাবি করা হয়েছিল, মোবাইলের বেশি ব্যবহার রক্তচাপ বাড়াতে পারে। মোবাইল থেকে বেরনো তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলে, যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি এবং শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এর ফলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বৃদ্ধি পায়, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ক্রনিক মানসিক চাপ হাইপারটেনশনের মূল কারণ হতে পারে।
ডিজিটাল আসক্তি কাটানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানো উচিত। মোবাইল থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকতে হলে, শারীরিক পরিশ্রম এবং মেডিটেশন বা ধ্যানের অভ্যাস তৈরি করা উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে, রাতে মোবাইলে স্ক্রল করার পরিবর্তে ধ্যান করা শরীর ও মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, ছোটরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বেশি সময় কাটাচ্ছে, যার ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তাই ডিজিটাল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পুরনো শখগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। বই পড়া, খেলাধুলা, বাগান করা, রান্না, গান শেখা, নাচ বা আবৃত্তি— এই ধরনের কার্যকলাপের মাধ্যমে ফোনের নেশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
শিহাব