
ছবি: সংগৃহীত
থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিপাকক্রিয়া, শক্তি মাত্রা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষা করে। হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের অভাব) ও হাইপারথাইরয়েডিজম (অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন) শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাইরয়েড ফাংশন উন্নত করতে এবং উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে।
থাইরয়েড রোগীদের জন্য ৮টি গুরুত্বপূর্ণ খাবার:
১. চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন)
চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে এবং থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক। এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন ডি, যা হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২. বাদাম ও বীজ (ব্রাজিল নাট, ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট)
ব্রাজিল নাট উচ্চমাত্রার সেলেনিয়াম সরবরাহ করে, যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়ক। ফ্ল্যাক্সসিড ও আখরোটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা থাইরয়েড সংক্রান্ত প্রদাহ কমায়।
৩. ডিম
ডিমে রয়েছে আয়োডিন ও সেলেনিয়াম, যা থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি উচ্চমানের প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা শরীরে শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৪. সবুজ শাকসবজি (পালং শাক, কেলে, সুইস চার্ড)
এগুলো ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে ও ক্লান্তি কমাতে সহায়ক। তবে, ক্রুসিফেরাস জাতীয় শাক (যেমন: কেলে ও ব্রকোলি) হাইপোথাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে রান্না করে খাওয়া উচিত, যাতে এটি আয়োডিন শোষণে বাধা না দেয়।
৫. দুগ্ধজাত খাদ্য (দই, চিজ, দুধ)
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার উচ্চ মাত্রায় আয়োডিন সরবরাহ করে, যা থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, যা থাইরয়েডের কার্যকারিতার সাথে সংযুক্ত।
৬. বেরি জাতীয় ফল (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি)
বেরি জাতীয় ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা অটোইমিউন থাইরয়েড রোগীদের (যেমন: হাশিমোটো ডিজিজ) জন্য উপকারী।
৭. হোল গ্রেইন (কুইনোয়া, ব্রাউন রাইস, ওটস)
হোল গ্রেইন জাতীয় খাবারে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরের শক্তি বজায় রাখে ও পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
৮. লীন প্রোটিন (মুরগির মাংস, টার্কি, টফু, ডাল)
লীন প্রোটিন পেশি সংরক্ষণ ও শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা শক্তি হ্রাস ও মেজাজের ওঠানামা প্রতিরোধে কার্যকর।
থাইরয়েড রোগীদের জন্য ডায়েট পরামর্শ:
*প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন – চিনি ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। *৬ পর্যাপ্ত পানি পান করুন – বিপাকক্রিয়া ও পরিপাক ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে।
*অতিরিক্ত সয়া জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন – এটি থাইরয়েড ওষুধের শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
*গ্লুটেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন – অটোইমিউন থাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে গ্লুটেন-মুক্ত ডায়েট উপকারী হতে পারে।
থাইরয়েডের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পুষ্টিকর খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন যথেষ্ট নয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনাও অত্যন্ত জরুরি। থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা উচিত।
রিফাত