
ছবি: সংগৃহীত
ফ্লসিং হলো একটি ডেন্টাল কেয়ার পদ্ধতি যেখানে বিশেষ ধরনের ডেন্টাল ফ্লস (একটি সরু সুতা বা ফাইবার) ব্যবহার করে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা ও প্লাক পরিষ্কার করা হয়। দাঁতের ব্রাশ দাঁতের সব কোণ ও ফাঁকিগুলোতে পৌঁছাতে পারে না, কিন্তু ফ্লসিং সেসব জায়গায় সহজেই পৌঁছে যেতে পারে এবং গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
১. প্লাক ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে
দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা দীর্ঘ সময় জমে থাকলে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা প্লাক গঠনে সহায়তা করে। প্লাক (দাঁতে জমে থাকা আঠালো ব্যাকটেরিয়ার স্তর) না সরালে তা ক্যাভিটি বা দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে।
২. মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে
যদি দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ময়লা ঠিকমতো পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে তা মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা জিঞ্জিভাইটিস (মাড়ির সংক্রমণ) এবং পরবর্তীতে পেরিওডন্টাইটিসের (গভীর মাড়ির রোগ) কারণ হতে পারে।
৩. মুখের দুর্গন্ধ কমায়
ফ্লসিং করলে আটকে থাকা খাবারের কণা ও ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়, যা মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ।
৪. দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটি থেকে রক্ষা করে
দাঁতের ব্রাশ সাধারণত দাঁতের বাইরের অংশ পরিষ্কার করে, কিন্তু ফ্লসিং দাঁতের মধ্যবর্তী অংশকে পরিষ্কার করে, যা দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৫. দীর্ঘমেয়াদী ডেন্টাল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
নিয়মিত ফ্লসিং করলে দাঁত ও মাড়ি সুস্থ থাকে এবং ভবিষ্যতে দন্তচিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
ফ্লসিং কীভাবে করবেন?
ফ্লসিং করার সঠিক নিয়ম মেনে চললে এটি বেশি কার্যকর হয়। সঠিক ফ্লস নির্বাচন করুন। আপনার দাঁতের ফাঁক অনুযায়ী মোমযুক্ত বা অন-মোমযুক্ত ফ্লস, ওয়াটার ফ্লসার বা ডেন্টাল টেপ ব্যবহার করতে পারেন। ফ্লস ধরে রাখুন। প্রায় ১৮ ইঞ্চি (৪৫ সেমি) ফ্লস কেটে নিন এবং দুই হাতের মাঝের আঙুলে ফ্লস পেঁচিয়ে ধরুন। দাঁতের ফাঁকে প্রবেশ করান। ফ্লসটিকে আলতোভাবে দাঁতের ফাঁকে প্রবেশ করান এবং "C" আকারে বাঁকিয়ে ধীরে ধীরে উপরে-নিচে করুন। মাড়ির নিচে পরিষ্কার করুন। ফ্লস দাঁতের গোড়ায় পৌঁছে গেলে খুব সতর্কতার সঙ্গে নিচ থেকে উপরে স্ক্র্যাপ করুন। তবে খুব বেশি জোরে করলে মাড়ি কেটে যেতে পারে। প্রতিটি দাঁতের জন্য নতুন অংশ ব্যবহার করুন। একটি দাঁত পরিষ্কার করার পর নতুন অংশ ব্যবহার করুন, যাতে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে না পড়ে। ফ্লসিং করার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন, যাতে পরিষ্কার হওয়া ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা সম্পূর্ণভাবে মুখ থেকে বেরিয়ে যায়।
প্রতিদিন কমপক্ষে একবার ফ্লস করা উচিত। রাতের বেলায় দাঁত ব্রাশ করার আগে বা পরে ফ্লস করা ভালো। খাওয়ার পর যদি দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে যায়, তাহলে ফ্লস ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফ্লসিং নিয়ে কিছু সাধারণ ভুল ও সমাধান
ভুল: খুব বেশি জোরে ফ্লস করা → সমাধান: আলতোভাবে ফ্লস করুন, যাতে মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ভুল: শুধুমাত্র সামনের দাঁত ফ্লস করা → সমাধান: সব দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার করুন, বিশেষ করে পেছনের দাঁত।
ভুল: প্রতিদিন ফ্লস না করা → সমাধান: নিয়মিত ফ্লস করা অভ্যাস করুন।
দাঁতের ফ্লসিং শুধু দাঁত পরিষ্কারের একটি অতিরিক্ত ধাপ নয়, এটি সুস্থ দাঁত ও মাড়ির জন্য অপরিহার্য। ফ্লসিং প্লাক ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে দাঁতের ক্ষয়, ক্যাভিটি এবং মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ফ্লসিং করলে দীর্ঘমেয়াদী ডেন্টাল স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ব্যয়বহুল দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজন কমে যায়।
ফারুক