ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ফ্যাটি লিভারের যে ঝুঁকি বাড়ছে!

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২২ মার্চ ২০২৫

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ফ্যাটি লিভারের যে ঝুঁকি বাড়ছে!

ছবি: সংগৃহীত

পর্যাপ্ত ঘুম শুধু শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যই জরুরি নয়, এটি আমাদের বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) ও লিভারের স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৭ ঘণ্টার কম ঘুম শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়ায় এবং অস্বাভাবিক কোলেস্টেরল মাত্রার পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

কম ঘুম ও শরীরের চর্বি বৃদ্ধির সম্পর্ক

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়— ঘ্রেলিন (ক্ষুধা বৃদ্ধিকারী হরমোন) এবং লেপ্টিন (ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন)। কম ঘুমের কারণে ঘ্রেলিনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লেপ্টিনের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভূত হয়। বিশেষ করে উচ্চ চর্বিযুক্ত ও উচ্চ চিনি-সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে।

এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ইনসুলিন সংবেদনশীলতা (insulin sensitivity) কমিয়ে দেয়। ইনসুলিন আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং যখন শরীর ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, তখন অতিরিক্ত গ্লুকোজ চর্বি হিসেবে জমতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাব দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর চারপাশে (ভিসারাল ফ্যাট) চর্বি জমার হার বাড়িয়ে দেয়, যা ফ্যাটি লিভার রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার ও কম ঘুমের সম্পর্ক

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমে। লিভার আমাদের শরীরের ফ্যাট বিপাকক্রিয়া পরিচালনা করে এবং রক্ত পরিশোধনের কাজ করে। কিন্তু ঘুমের অভাব এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, ফলে লিভারে ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং লিভারের ক্ষতি করতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সার্কাডিয়ান রিদমের (Circadian Rhythm) ব্যাঘাত। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি লিভারের ফ্যাট বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অনিয়মিত ঘুমের কারণে এই ছন্দ ব্যাহত হয়, ফলে লিভার চর্বি ভাঙতে পারে না এবং অতিরিক্ত চর্বি জমে লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এটি লিভার ফাইব্রোসিস (scarring) এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু কম ঘুম ও ফ্যাটি লিভারের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, তাই সুস্থ লিভার ও শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি—

*নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলুন – প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

*ঘুমের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন – রাতে স্ক্রিনের (মোবাইল, টিভি) নীল আলো এড়িয়ে চলুন, ঘর অন্ধকার ও শীতল রাখুন এবং আরামদায়ক গদি ও বালিশ ব্যবহার করুন।

*সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন – চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়িয়ে চলুন। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন গ্রহণ করুন।

*নিয়মিত ব্যায়াম করুন – শারীরিক পরিশ্রম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, ঘুমের মান উন্নত করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

*স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন – দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় ও শরীরে চর্বি জমার হার বাড়ায়। নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং লিভারের স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য। তাই সুস্থ লিভার ও শরীরের জন্য নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

রিফাত

×