
ছবি: সংগৃহীত
সিগারেট এবং মদ শিল্প একত্রে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রাজস্ব তৈরি করে। হাজার হাজার মানুষ এই শিল্পে কর্মরত, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয়, এবং সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এর উপস্থিতি আমেরিকান ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এই দুটি শিল্প মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনে ব্যাপক ক্ষতি করেছে, যার ফলে মানুষের আয়ু কমে গেছে এবং জনস্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আমেরিকান অ্যাডিকশন সেন্টারস এর গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিচে আলোচনা করা হল:
সিগারেট বনাম মদ
কোলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের "গো অ্যাস্ক অ্যালিস!" ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, শারীরিকভাবে এটা বলা কঠিন যে সিগারেট বা মদ কোনটি মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকর। নানা উপাদান যেমন বয়স, লিঙ্গ, জীবনযাপন, পারিবারিক ইতিহাস এবং মানসিক স্বাস্থ্য এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, মদ খাওয়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে কিছু উপকারিতা থাকতে পারে, যেমন হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনা, কিন্তু সিগারেটের কোনো পরিমাণই শরীরের জন্য উপকারী নয়। সিগারেটের ক্ষেত্রে সব স্তরের ক্ষতিই স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে।
মদ, যদিও মাঝে মাঝে উপকারী হতে পারে, তবুও অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে তা অনেক রোগের সৃষ্টি করে এবং প্রতিবছর ২.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটায়, যা যক্ষ্মা বা এইচআইভি-এর চেয়েও বেশি।
কোনটি বেশি ক্ষতিকর: মদ না সিগারেট?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন অ্যালকোহল অ্যাবিউজ অ্যান্ড অ্যালকোহলিজম জানাচ্ছে, মদ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ, এবং এটি বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত। মদ পান শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অন্যদিকে, সিগারেটের মধ্যে প্রায় ৪,০০০ রকমের রাসায়নিক উপাদান থাকে, যার মধ্যে নিকোটিন অন্যতম, যা সিগারেটকে অত্যন্ত আসক্তিকর করে তোলে। এই উপাদানগুলো শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। প্রতিটি বছর সিগারেটের কারণে ৪৪৩,০০০ আমেরিকান মারা যায়, যা একটি চরম উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান।
সামাজিক ক্ষতি এবং মদ্যপান
যদিও সিগারেটের ক্ষতি সম্পর্কে সবাই সচেতন, মদ্যপানও মানুষের সামাজিক জীবন ও ব্যক্তিগত মর্যাদাকে ধ্বংস করতে পারে। মদ্যপান যেমন শারীরিক ক্ষতি করে, তেমনি এটি মানুষের পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ক এবং মানসিক অবস্থার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মদ্যপান সমাজে কিছুটা গ্রহণযোগ্য হলেও এর ক্ষতি অত্যন্ত গুরুতর এবং সর্বব্যাপী।
গবেষণায় দেখা গেছে, মদ্যপান শুধু শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি মানুষকে অদূরদর্শী এবং অসতর্কও করে তোলে, যার ফলে দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড বা যৌন সহিংসতা ঘটতে পারে।
মদ্যপান এবং সিগারেটের সম্মিলিত প্রভাব
গবেষণা দেখিয়েছে যে সিগারেটের দাম বাড়ালে মদ্যপানের পরিমাণও কমে যায়। সিগারেটের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে মদ্যপানও কমানো সম্ভব, যার ফলে জনস্বাস্থ্য আরও ভালো হতে পারে।
পরিশেষে, সিগারেট এবং মদ—দুটোই জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, তবে তাদের প্রভাবের ধরন এবং সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আলাদা। সিগারেটের ক্ষতি অনেক বেশি দৃশ্যমান এবং সুস্পষ্ট, তবে মদ্যপানও সমানভাবে ক্ষতিকর এবং এটি সমাজে আরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, এসব বিষয়ের বিপদ সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্যসূত্র: https://deserthopetreatment.com/alcohol-abuse/cigarettes/
আবীর