
ছবি: সংগৃহীত
খাবার খাওয়ার সময়, গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় অথবা অবসর কাটানোর সময় হঠাৎ হেঁচকি প্রকোপ শুরু হওয়া খুব সাধারণ একটি বিষয়। এমনকি যখন তখন কোনো কারণ ছাড়াই মানুষের হেঁচকি শুরু হলে তা নিয়েও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, হেঁচকি মিনিট খানেকের মধ্যেই স্বাভাবিকভাবে থেমে যায়।
তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হেঁচকির উদাহরণও রয়েছে। যেমন: সবচেয়ে বেশি সময় ধরে হেঁচকি ওঠার বিশ্বরেকর্ড মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস অসবোর্নের ঘটনাকে। ১৯২২ সালে হেঁচকি তোলার শুরু করেন রসবোর্ন। কথিত আছে সেসময় তিনি একটি শুকর ওজন করার চেষ্টায় ছিলেন। অসবোর্ন হেঁচকি তোলা থামান ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ, মোট ৬৮ বছর পর।
বিজ্ঞানীরা হাজার বছর ধরে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতি হীন এই শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এসময় শ্বাসনালিতে সাযান্য খিঁচুনির মতো হয়, যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে 'হিক' শব্দ হয়। ফুসফুসের নিচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর যেটিকে ডায়াগ্রাম বলে, হঠাৎ এর সংকোচনের ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়।
হেঁচকি ওঠার কারণ:
হেঁচকি ওঠার ১০০ এর বেশি কারণ থাকতে পারে। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো খুবই সামান্য কারণেই হয়ে থাকে।
ওষুধ নির্মাণ সংস্থা একমির সিনিয়র ম্যানেজার এবং চিকিৎসক আফরোজা আক্তার বলেন, হেঁচকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ দ্রুত খাবার খাওয়া। দ্রুত খাবার খাওয়ার কারণে খাবারের সাথে সাথে বাতাস পেটের ভেতর প্রবেশ করে। এর ফলে ভ্যাগাস নার্ভের কার্যকলাপ ব্যাঘাত পায়। ফলে হেঁচকি তৈরি হয়।
চেতনা নাশক, উত্তেজনা বর্ধক, পারকিনসন রোগ বা কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরণে ওষুধ নেওয়ার ফলেও হেঁচকি তৈরি হতে পারে। এছাড়া, কিছু অসুখের ক্ষেত্রেও মানুষের হেঁচকি হতে পারে।
ডাক্তার আফরোজা বলেন, কিডনি ফেইল করলে, স্ট্রোক হলে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেনিনজাইটিসের কারণেও অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেঁচকি শুরু হওয়ার জন্য এসব কোনো করণেরই দরকার পড়ে না।
হাসি বা কাশির মধ্যে, অতিরিক্ত মদ্যপান, দ্রুত খাবার খাওয়া বা ঝাঁজযুক্ত পানীয় বেশি খাওয়ার কারণে হেঁচকি তৈরি হতে পারে।
হেঁচকি থামানোর উপায়
ঘরোয়াভাবে হেঁচকি থামানোর উপায় হিসেবে দুটি পদ্ধতি হতে পারে। একটি হলো, রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া যাতে শ্বাসনালিতে খিঁচুনি বন্ধ হয়। আরেকটি হলো, শ্বাস প্রশ্বাসের মাঝে সমন্বয় করে ভ্যাগাস স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করা।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সাইটের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি পদ্ধতিতে হেঁচকি থামানোর যায়। যেমন:
১. কাগজের ব্যাগে নিঃশ্বাস ফেলা, তবে এক্ষেত্রে ব্যাগে মাথা ঢুকানো যাবে না।
২. দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া।
৩. বরফ ঠাণ্ডা পানি খাওয়া
৪. কিছু দানাদার চিনি খাওয়া
৫. লেবুতে কামড় দেওয়া বা ভিনেগারের স্বাদ নেওয়া
৬. স্বল্প সময়ের জন্য দম বন্ধ করে রাখা
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন
সাধারণত হেঁচকি নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তবে যদি অতিরিক্ত সময় ব্যাপী হেঁচকি হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ডাক্তার আফরোজা বলেন, হেঁচকি নিরাময়ে যদি ঘরোয়া পদ্ধতি কাজ না করে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মায়মুনা