
ছবিঃ সংগৃহীত
পানি আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য, তবে জানেন কি, অতিরিক্ত পানি পান করাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে? প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। জেনে নিন অতিরিক্ত পানি পান করার ৭টি মারাত্মক অসুবিধা এবং কেন ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
১. কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ
আমাদের কিডনি শরীরের অতিরিক্ত পানি ফিল্টার করে এবং বর্জ্য অপসারণ করে। কিন্তু যখন আমরা বেশি পানি পান করি, তখন কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
২. প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট হ্রাস
সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত পানি পান করলে এই ইলেকট্রোলাইটগুলো পাতলা হয়ে যায়, যার ফলে পেশিতে খিঁচুনি, দুর্বলতা ও বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।
৩. পানির বিষক্রিয়া হতে পারে
অল্প সময়ে অতিরিক্ত পানি পান করলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে, যাকে হাইপোনাট্রেমিয়া বলা হয়। এটি মস্তিষ্কে ফুলে যাওয়া, বমি, খিঁচুনি এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
৪. ঘন ঘন প্রস্রাব ও ঘুমের ব্যাঘাত
অতিরিক্ত পানি পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়, যা দৈনন্দিন জীবন ও ঘুমের সময় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে রাতে বারবার টয়লেটে যাওয়ার ফলে ঘুমের গুণগত মান কমে যায় এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
৫. হৃদযন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি
অতিরিক্ত পানি পান করলে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। এটি বিশেষত যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা আছে, তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
৬. হাত, পা ও মুখ ফুলে যাওয়া
অতিরিক্ত পানি শরীরে ধরে রাখার ফলে হাতে, পায়ে ও মুখে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। যদি কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই শরীরের কোনো অংশ ফুলে যায়, তাহলে এটি অতিরিক্ত পানি পানের লক্ষণ হতে পারে।
৭. হজম ও পুষ্টি শোষণে সমস্যা
খাবারের সঙ্গে বেশি পানি পান করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড পাতলা হয়ে যেতে পারে, ফলে হজম ব্যাহত হয়। এতে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শোষণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কতটুকু পানি পান করা উচিত?
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ২-৩ লিটার (৮-১২ গ্লাস) পানি পান করা উচিত। তবে এটি বয়স, আবহাওয়া এবং শারীরিক কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে। শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক আছে কি না তা বোঝার সহজ উপায় হলো প্রস্রাবের রঙ দেখা। হালকা হলুদ রঙের প্রস্রাব মানেই শরীর ভালোভাবে হাইড্রেটেড, আর যদি গাঢ় হলুদ হয়, তাহলে পানি কম পান করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পানি পান করা যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাও শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সচেতনভাবে পানি পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।
রিফাত