
ছবিঃ সংগৃহীত
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ অভ্যাসই হতে পারে নানা রোগের মূল কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও দূষিত উপাদানই প্রায় ৮০% রোগের জন্য দায়ী। অথচ আমরা নিজের অজান্তেই প্রতিদিন এমন কিছু ভুল করি, যা আমাদের বাড়িকে জীবাণুর আখড়ায় পরিণত করছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন সাতটি অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা আমাদের অসুস্থ করে তুলতে পারে—
১. নোংরা জুতা পরে ঘরে প্রবেশ করা
জুতার মাধ্যমে আমরা রাস্তা, পাবলিক টয়লেট, পার্কসহ নানা স্থানের ময়লা, ব্যাকটেরিয়া ও রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ঘরে নিয়ে আসি। এই জীবাণু মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরের বাইরে রাখা কিংবা আলাদা ইনডোর স্লিপার ব্যবহার করা উচিত।
২. টয়লেটের ঢাকনা খোলা রেখে ফ্লাশ করা
অনেকেই টয়লেট ব্যবহারের পর ঢাকনা না দিয়েই ফ্লাশ করেন। এতে টয়লেট প্ল্যুম (toilet plume) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া-ভর্তি ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা টুথব্রাশ, তোয়ালে ও সাবানের উপর জমতে পারে। ফলে ই-কোলাই ও নরোভাইরাসের মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ফ্লাশ করার আগে অবশ্যই টয়লেটের ঢাকনা বন্ধ করা উচিত।
৩. ট্র্যাভেল ব্যাগ বিছানায় রাখা
বিমানবন্দর, হোটেল, ট্যাক্সি ট্রাঙ্ক ও বিভিন্ন ময়লা স্থানে ঘুরে বেড়ানো ব্যাগে প্রচুর জীবাণু থাকে। সেই ব্যাগ যদি সরাসরি বিছানায় রাখা হয়, তাহলে জীবাণুগুলো বালিশ ও চাদরের মাধ্যমে আমাদের ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই ব্যাগ সবসময় নির্দিষ্ট স্থানে বা মেঝেতে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৪. বাইরের পোশাক পরে বিছানায় যাওয়া
গণপরিবহন, অফিস চেয়ার ও ভিড় জায়গা থেকে আমাদের পোশাকে নানা ব্যাকটেরিয়া ও ধূলিকণা লেগে যায়। এই পোশাক পরে বিছানায় শোয়া বা বসলে ত্বকের সংক্রমণ, ব্রণ এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঘরে ফিরেই পোশাক পরিবর্তন করা এবং পরিষ্কার পোশাক পরে বিছানায় যাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
৫. বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে হাত না ধোয়া
দরজার হাতল, লিফটের বোতাম, বাজারের ব্যাগ ও নানা জায়গায় ছড়ানো জীবাণু হাতের মাধ্যমে সহজেই আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে মুখ, চোখ বা নাকে হাত দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বাইরে থেকে ফিরেই কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি।
৬. বেশি দিন একই স্পঞ্জ ব্যবহার করা
কিচেন স্পঞ্জ আর্দ্র থাকায় এতে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরনো স্পঞ্জে টয়লেট সিটের চেয়েও বেশি জীবাণু থাকতে পারে! এটি দিয়ে থালা-বাসন পরিষ্কার করলে সেই জীবাণু খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই প্রতি সপ্তাহে স্পঞ্জ বদলানো বা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন।
৭. দীর্ঘদিন ধরে বালিশের কভার না ধোয়া
প্রতিদিনের ঘুমের সময় বালিশের কভারে ত্বকের মৃত কোষ, তেল, ঘাম ও ব্যাকটেরিয়া জমে। নিয়মিত না ধুলে এটি ব্রণ, অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। তাই কমপক্ষে সপ্তাহে একবার বালিশের কভার ধোয়া উচিত।
এই ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো মেনে চললে, সহজেই অনেক রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
রিফাত