
ছবি : সংগৃহীত
আজ বিশ্ব নিদ্রা দিবস। ব্যস্ত জীবনের চাপে মানসম্পন্ন ঘুম যেন এখন বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। ভালো ঘুম কেবল আরামদায়ক অনুভূতি দেওয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমানোর সঙ্গেও জড়িত।
“ভালো ঘুম কেবল প্রশান্তি দেয় না, এটি আমাদের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন গুরুগ্রামের ফোর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পালমোনোলজি বিভাগের পরিচালক এবং ইউনিট প্রধান ডা. মনোজ গোয়েল।
যদি আপনি রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন এবং সকালে ক্লান্তি নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন, তবে এই বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলো আপনাকে প্রশান্তিময় ঘুম ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
১. একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা
আমাদের শরীর রুটিনে অভ্যস্ত থাকে।
“প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জাগা— এমনকি ছুটির দিনেও— আমাদের দেহের জৈবিক ঘড়িকে (circadian rhythm) নিয়ন্ত্রণ করে, যা ঘুমাতে যাওয়া এবং স্বাভাবিকভাবে ঘুম থেকে ওঠাকে সহজ করে তোলে,” জানিয়েছেন ফরিদাবাদের মারেঙ্গো এশিয়া হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের পরিচালক ডা. কুনাল বেহরানি।
২. শোবার আগে আরামদায়ক রুটিন তৈরি করুন
ডা. বেহরানি পরামর্শ দিয়েছেন, ঘুমানোর আগে মৃদু বই পড়া, গভীর শ্বাস নেওয়া, ধ্যান বা গরম পানিতে গোসল করার মতো প্রশান্তিদায়ক কাজ করুন।
“এসব কাজ আপনার শরীরকে বিশ্রামের সংকেত দেয়, ফলে ঘুম আসা সহজ হয়ে যায়,” বলেছেন তিনি।
৩. ঘুমের পরিবেশকে উন্নত করুন
আপনার শোবার ঘরটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে এটি শান্তিপূর্ণ এবং আরামদায়ক হয়। ঘরের তাপমাত্রা ১৮-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা উচিত।
“আরামদায়ক তোশক এবং বালিশে বিনিয়োগ করুন। ঘর অন্ধকার রাখতে ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে হোয়াইট নয়েজ মেশিন ব্যবহার করুন,” পরামর্শ দিয়েছেন ডা. গোয়েল।
৪. শোবার আগে স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন
ফোন, ট্যাবলেট এবং কম্পিউটারের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের জন্য দায়ী।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ঘুমানোর অন্তত ৬০ থেকে ৯০ মিনিট আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন।
৫. ঘুমানোর আগে খাদ্যাভ্যাসের প্রতি লক্ষ্য রাখুন
ডা. গোয়েল পরামর্শ দিয়েছেন, “ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। ভারী বা মসলাদার খাবার খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।”
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
৩০-৪৫ মিনিটের মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম) গভীর ঘুমে সহায়ক। তবে, “শোবার ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কঠোর ব্যায়াম করলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হতে পারে এবং ঘুম আসতে দেরি হতে পারে,” ব্যাখ্যা করেছেন ডা. গোয়েল।
৭. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করুন
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ভালো ঘুমের প্রধান বাধা।
“মাইন্ডফুলনেস, ধ্যান, জার্নালিং বা গভীর শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন আপনাকে ঘুমানোর আগে মন শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে,” বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
৮. দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন
২০-৩০ মিনিটের ছোট ঝিমুনি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘ বা বিকেলের পরে ঘুমানো রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
“যদি রাতে ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে দিনের বেলা ঘুমানো এড়িয়ে চলুন,” পরামর্শ দিয়েছেন ডা. বেহরানি।
৯. দিনের বেলা সূর্যের আলোতে থাকুন
দিনের বেলায় বিশেষ করে সকালে সূর্যের আলোতে থাকা মেলাটোনিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের জৈবিক ঘড়িকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
“বাইরে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন বা জানালার পাশে বসুন,” বলেছেন ডা. বেহরানি।
১০. পেশাদার সহায়তা নিন
উপরের সমস্ত কৌশল অনুসরণ করার পরও যদি ঘুম না আসে, তবে পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
“সম্ভবত ইনসমনিয়া বা স্লিপ অ্যাপনিয়া-এর মতো সমস্যা থাকতে পারে, যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে,” উপসংহার টেনেছেন ডা. বেহরানি।
ভালো ঘুমে সতেজ থাকুন!
ঘুম আপনার সামগ্রিক সুস্থতার ভিত্তি। এই বিশেষজ্ঞ-সমর্থিত কৌশলগুলো আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে এবং প্রতিদিন সকালের শুরুটা আরও চাঙ্গা করে তুলতে সহায়ক হবে। তাই আজ থেকেই ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।
সূত্র: https://www.moneycontrol.com/health-and-fitness/world-sleep-day-10-expert-approved-tips-to-get-a-good-night-s-sleep-article-12963761.html#google_vignette
মো. মহিউদ্দিন