
ছবি : সংগৃহীত
হঠাৎ কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে তার নাম মনে করতে পারছেন না? সকালে বাজারের তালিকাটা কোথায় রেখেছেন, সেটাও ভুলে যাচ্ছেন? এমন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন নিয়মিত? এটি মূলত স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ।
ইদানীং সব বয়সের মানুষই স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক চাপ, বিশ্রামের অভাব, পরিবেশগত দূষণ, প্রযুক্তি আসক্তি, ঘুমের অভাবসহ নানা কারণে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস স্মৃতিশক্তি আরও কমিয়ে দিতে পারে। স্কাইবোল্ডের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যাভ্যাস সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। ভাজা, জাঙ্ক ফুড এবং চিনিযুক্ত খাবার স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেয়। অন্যদিকে, ভিটামিন, খনিজ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।
শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
শারীরিক কার্যকলাপ শুধু শরীরের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করা জরুরি। এতে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
পানির ঘাটতি
শরীরে পানির ঘাটতি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতার কারণে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।
ঘুমের অভাব
ঘুম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুম পর্যাপ্ত হলে মস্তিষ্কে তথ্য ধারণ এবং স্মৃতিশক্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা বাড়ে।
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্ককে অলস করে তোলে। দীর্ঘ সময় ধরে ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ফলে মনোযোগের ঘাটতি ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কের কোষের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ মস্তিষ্কের কোষের মারাত্মক ক্ষতি করে। ধূমপানে নিকোটিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অ্যালকোহল গ্রহণ মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা দুর্বল করে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা রোধে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরুরি। সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কমিয়ে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। স্মার্টফোন ব্যবহারে ভারসাম্য রাখা এবং ধূমপান-মদ্যপান এড়িয়ে চললে স্মৃতিশক্তি দীর্ঘস্থায়ীভাবে সক্রিয় থাকবে।
মো. মহিউদ্দিন