
ছবিঃ সংগৃহীত
ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ, যার মৃত্যু ঝুঁকি অন্যান্য অনেক রোগের তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৫ জন ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীর মধ্যে প্রায় ১০ জন মারা যান, যেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় ১০০০ জনের মধ্যে ৪-৫ জন মৃত্যুবরণ করতেন। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ক্যান্সার কতটা মারাত্মক একটি রোগ। তাই ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক বলেন, "আমাদের জানতে হবে ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ, প্রাথমিক লক্ষণ এবং কীভাবে এটি দ্রুত শনাক্ত করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর হয়।"
কোন লক্ষণগুলো ক্যান্সারের সতর্কবার্তা হতে পারে?
👉 দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: যদি কেউ কোনো অসুখে ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে আক্রান্ত থাকেন, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়ার পরও সুস্থ না হন, তাহলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন।
👉 গলার স্বরে পরিবর্তন: হঠাৎ করে গলার স্বর বসে যাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
👉 শরীরের কোথাও অস্বাভাবিক পিণ্ড বা চাকা: যদি শরীরের কোনো স্থানে পিণ্ড বা চাকা অনুভূত হয় এবং তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
👉 অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ:
- মাসিকের অনিয়মিত রক্তক্ষরণ
- প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্ত আসা
- দাঁতের মাড়ি থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
এগুলো ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
👉 ক্ষত সারতে দেরি হওয়া: যদি শরীরের কোনো ক্ষত দীর্ঘদিনেও ভালো না হয় এবং বরং তা বাড়তে থাকে, তাহলে তা ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে।
👉 মলত্যাগের স্বাভাবিক অভ্যাস পরিবর্তন:
- হঠাৎ করে অনিয়মিত মলত্যাগ (বেশি বা কম হয়ে যাওয়া)
- ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া
এগুলোও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
👉 খাবার গিলতে সমস্যা: খাবার গিলে ফেলতে সমস্যা হলে বা গলায় কোনো বাধা অনুভূত হলে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
👉 রক্তস্বল্পতা: হঠাৎ করেই শরীরে রক্তের মাত্রা কমে গেলে এবং দুর্বলতা অনুভূত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
👉 দীর্ঘস্থায়ী কাশি: আমাদের দেশে সাধারণত ঠান্ডা-জ্বরজনিত কারণে কাশি হয়ে থাকে, তবে ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে কাশি থাকলে এবং চিকিৎসার পরও তা না কমলে, বিশেষ করে যদি কাশির সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে তা ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
👉 হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন কমতে থাকে, তবে তা দেহের ভেতরে কোনো জটিল রোগের ইঙ্গিত হতে পারে, যার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম।
ভয় নয়, সচেতনতা প্রয়োজন
ক্যান্সারের অনেক উপসর্গ সাধারণ রোগের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু যদি কোনো লক্ষণ ১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয় এবং সাধারণ চিকিৎসায় ভালো না হয়, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক পরামর্শ দেন, "ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। যদি দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই ভয় না পেয়ে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত।"
ইমরান