ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

মূত্রথলির ক্যান্সার বা টিউমারের লক্ষণ ও এর চিকিৎসা

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৯, ১৪ মার্চ ২০২৫

মূত্রথলির ক্যান্সার বা টিউমারের লক্ষণ ও এর চিকিৎসা

ছবি : সংগৃহীত

মূত্রথলির ক্যান্সার বা টিউমারের লক্ষণ ও এর চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. রোক্সানা আফরোজ।

ডা. রোক্সানা আফরোজ বলেন, আগে আমাদের ধারণা ছিল, যে মূত্রথলির টিউমার এই রোগটি বুঝি খুব কমন না। কিন্তু আমি নিজেই ইউরোলজিস্ট হবার পর থেকে খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে নারী-পুরুষ কেউ বাদ যাচ্ছে না এই রোগ থেকে এবং খুব একটি আনকমন রোগ নয়।

যে সকল টিউমার মূত্রথলিতে হয় তার বেশিরভাগই কিন্তু ক্যান্সার জাতীয়। যারা ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রে রোগের আশঙ্কা বেশি। চা, কফি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা। এছাড়া যাদের ক্ষেত্রে রং এর সাথে জড়িত কাজ করে করেন যারা, বিশেষ করে যারা পেইন্টার, বিভিন্ন জায়গায় রং করেন, রং নিয়ে কাজ করেন বা বিভিন্ন রকম হেভি মেটাল গুলো ডিল করেন, কারখানায় কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু মূত্রথলির ক্যান্সার হবার আশঙ্কা খুবই বেশি।

মূত্রথলির ক্যান্সারের প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ হচ্ছে প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং এই রক্ত যাওয়াতে কিন্তু সাধারণত ব্যথা থাকে না। রোগীরা বলেন, যে আমার কোন অসুবিধা নেই হঠাৎ করে দেখছি প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে। শুধু রক্তই নয়, রক্তের চাকা বা দলা যাকে আমরা বলি সেটি যায়। কখনো কখনো মাংসের টুকরার মতো যায়। সেটি হলো যে টিউমারের কিছু অংশ অনেক সময় খয়ে পড়ে বা খসে পড়ে, আমরা বলি, সেখান থেকে সেটি প্রসবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

আগে আমাদের ধারণা ছিল যে মুত্রথলির টিউমার এই রোগটি বুঝি খুব কমন না। কিন্তু আমি নিজেই ইউরোলজিস্ট হবার পর থেকে খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে, নারী-পুরুষ কেউ বাদ যাচ্ছে না এই রোগ থেকে এবং খুব একটি আনকমন রোগ নয়। মূত্রথলিতে টিউমার বিভিন্ন রকম হতে পারে।

হতে পারে ক্যান্সার জাতীয়, হতে পারে ক্যান্সার জাতীয় নয়। কিন্তু যে সকল টিউমার মূত্রথলিতে হয় তার বেশিরভাগই কিন্তু ক্যান্সার জাতীয়। কি কি কারণে হয়?

বেশিরভাগ সময় তো আমরা একটা দেখি যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগগুলোর আশঙ্কা বেড়ে যায়। যারা ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রে রোগের আশঙ্কা বেশি। চা, কফি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা। এছাড়া যাদের ক্ষেত্রে রং এর সাথে জড়িত কাজ করেন, বিশেষ করে যারা পেইন্টার, বিভিন্ন জায়গায় রং করেন, রং নিয়ে কাজ করেন বা বিভিন্ন রকম হেভি মেটাল গুলো ডিল করেন, কারখানায় কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু মূত্রথলির ক্যান্সার হবার আশঙ্কা খুবই বেশি। এখন রোগীরা, এছাড়া জেনেটিক ফ্যাক্টর তো আছেই, যে আপনার বংশগতভাবে কিছু রোগের ঝুঁকি থাকেই।

রোগীরা কি উপসর্গ নিয়ে আসেন?

মূত্রথলির ক্যান্সারের প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ হচ্ছে প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং এই রক্ত যাওয়াতে কিন্তু সাধারণত ব্যথা থাকে না। রোগীরা বলেন, যে আমার কোন অসুবিধা নেই হঠাৎ করে দেখছি প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে। শুধু রক্তই নয়, রক্তের চাকা চাকা বা দলা যাকে আমরা বলি, সেটি যায়। কখনো কখনো মাংসের টুকরার মতো যায়। সেটি হলো যে টিউমারের কিছু অংশ অনেক সময় খয়ে পড়ে বা খসে পড়ে আমরা বলি, সেখান থেকে সেটি প্রসাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

তাহলে প্রধান উপসর্গ কিন্তু রক্ত যওিয়া। শুরুতে কিন্তু কোন ব্যথা থাকে না, তবে যদি এই ক্যান্সারই অনেক বেশি অ্যাডভান্স হয়, যেটি মূত্রথলির দেয়ালকে ধরে চারপাশের অন্য স্ট্রাকচারকে ধরে ফেলেছে, তখন কিন্তু তলপেটে ব্যথা বা পিঠে পিছন দিকে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, এগুলো অনেক উপসর্গ নিয়েও রোগীরা আসতে পারে।

এছাড়া কি উপসর্গ থাকতে পারে?

সেটি হলো অনেক রোগী কিন্তু ঘন ঘন প্রসাব, মনে হয় যে প্রসাবে চাপ আসলে আটকাতে পারি না, সঙ্গে সঙ্গে যেতে হয়, এরকম ইরিটেটিভ সিমটম নিয়েও আসতে পারে। যদি এই ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় অনেক অবহেলা করার কারণে, তখন রোগীরা কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া অথবা অনেক সময় হাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, এগুলো নিয়েও আসেন বা জন্ডিস নিয়েও আসতে পারে, খাওয়ার অরুচি এসব।

কি করবো?

যেকোনো মানুষ যাদের প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে, কিন্তু কোন উপসর্গ নেই, আপনারা চিন্তা করবেন, যে কোন ক্যান্সার জাতীয় রোগ শরীরে থাকতে পারে বিশেষ করে বয়স যদি বেশি হয়, অবহেলা করবেন না।

ইউরোলজিস্ট কে দেখান। উনি পরীক্ষা করতে দিবেন। হয়তোবা যেহেতু রক্ত যাচ্ছে একটি সিবিসি পরীক্ষাও আমরা দিয়ে থাকি, রক্তশূন্যতা হয়ে গেল কিনা দেখবার জন্য, আর একটি আল্ট্রাসোনোগ্রাম, প্রসাবতন্ত্রের আল্ট্রাসোনোগ্রাম করলেই কিন্তু ধারণা পাওয়া যায়, টিউমার কোথায় আছে, কোন দেয়ালে আছে, মূত্রথলির কতটুকু সাইজ, কিছুটা ধারণা আমরা পেয়েই থাকি।

এছাড়া কখনো কখনো প্রসবের সাইটোলজি নামক এক ধরনের পরীক্ষা আমরা বলি, ক্যান্সার সেল দেখবার জন্য, সেটিও দেয়া হয়।

এখন আসি যদি এতেই ধরা পড়ে, যে টিউমার পরবর্তীতে আসলে শুরুতেই খুব বেশি পরীক্ষা করবার প্রয়োজন পড়ে না। তবে কিছু চিহ্ন যদি আমরা পাই, যেমন ধরেন, মূত্রথলিতে টিউমার আছে, যেটি কিডনির নালিকে ইনভল্ভ করে কিডনিকে ফুলিয়ে ফেলেছে বা কিডনির নালিকে ফুলিয়ে ফেলেছে, তখন কিন্তু আমরা সিটি স্ক্যান দিই বা যদি আমরা চিন্তা করি যে না, এটি এডভান্স কেস, দেরি হয়ে গেছে, আরো হয়তো এক্সটেনশন থাকতে পারে, তখন আমরা সিটি স্ক্যান করতে দিই।

এরপর আসি যে, যদি আপনার মূত্রথলিতে ক্যান্সার বা টিউমার পাওয়া যায়, চিকিৎসা কি?

প্রথম চিকিৎসা হলো, আগে কনফার্ম হতে হবে, যে এটি ক্যান্সার বা এটি ক্যান্সার নয়। তার জন্য কি করি? আমরা প্রসাবের রাস্তায় যন্ত্র দিয়ে দিয়ে ঢুকে আমরা মূত্রথলি চেক করি, সেখানে দেখা যায় যে টিউমারটা কোথায় আছে, কিভাবে আছে, কতটুকু সাইজ, একটি না একাধিক এগুলো। এবং ওই সেটিং এ যদি টিউমার পাওয়া যায়, সেটিকে কেটে বের করে নিয়ে আসা হয়। বের করে নিয়ে এসে সেটি মাংস পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। যদি ক্যান্সার জাতীয় টিউমার আসে, তখন চিকিৎসা নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের উপর।

একটি হচ্ছে যে ক্যান্সার হলে এর গ্রেড কিরকম। আরেকটি হচ্ছে শুধুমাত্র এই মূত্রথলির যে ভিতরের লেয়ার আছে সেখানেই এটি সীমাবদ্ধ, নাকি এটি মাংসপেশিকে ধরেছে মূত্রথলির। যদি মাংসপেশিকে না ধরে থাকে, তাহলে কিন্তু ফারদার অপারেশন না করে ইন্ট্রাভেসিক্যাল থেরাপি দেয়া হয়। যেটি বিভিন্ন রকম থেরাপি আছে, হাই গ্রেড হলে বিসিজি দেয়া হয়। আর যদি দেখা যায় যে মাংসপেশিকে ধরেছে দেয়ালের, সেক্ষেত্রে কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসা হলো মূত্রথলি কেটে ফেলে দিয়ে অন্য ব্যবস্থা করে দেয়া প্রসাব করবার।

এখন চিকিৎসা নির্ভর করবে আপনি কোন ধাপে এসেছেন। যদি প্রাথমিক অবস্থায় যখন আসছেন আপনি ডক্টরের কাছে, তখনই এটি ছড়িয়ে যায় ডায়াগনোসিসের সময় তাহলে কিন্তু কোনটাই করা হয় না। তখন যেটা করা হয় সান্ত্বনাস্বরূপ তাকে তখন কেমোথেরাপি, আমরা যেটাকে বলি প্যালিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট, এগুলো দেয়া হয় অনকোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী। তো প্রসাবের সঙ্গে রক্ত গেলে বিশেষ করে যদি ব্যথা না থাকে, অবশ্যই সচেতন হবেন। এটা নিয়ে অযথা সময়ক্ষেপণ করে বিপদ দিকে আনবেন না।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=7A6vsXcTbYg

মো. মহিউদ্দিন

×