
প্রোটিন কখন গ্রহণ করা উচিত এবং কতটুকু বেশি হয়ে যায়? এ বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। বেশিরভাগ মানুষই এটি শুধুমাত্র খাবারের একটি অংশ হিসেবে দেখে থাকেন। তবে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য প্রোটিন কেবল খাবার নয়, বরং এটি পেশি গঠনের মূল উপাদান এবং শরীরের সুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন বিপাকক্রিয়া বাড়ায়, পেশি শক্তিশালী করে, দ্রুত পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং টিস্যু ও পেশির ক্ষয় রোধ করে। তবে শুধুমাত্র কতটুকু গ্রহণ করা হচ্ছে তা নয়, কোন সময়ে গ্রহণ করা হচ্ছে সেটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ
স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট নিকোল লিনহারেস কেডিয়া জানান, “প্রোটিন একটি অপরিহার্য ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যা অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত। এগুলো পেশি, টিস্যু এবং এনজাইম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। ব্যায়ামের ফলে পেশিতে যে চাপ সৃষ্টি হয় এবং যে ক্ষুদ্র ক্ষতি হয়, তা পুনরুদ্ধারে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
কুলিনারি নিউট্রিশনিস্ট ও ওয়েলনেস কোচ এশাঙ্কা ওয়াহি বলেন, “প্রোটিন শুধু ব্যায়ামকারীদের জন্য নয়, বরং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, এনজাইম সক্রিয়করণ এবং কোষীয় কার্যক্রম পরিচালনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
প্রোটিন গ্রহণের সঠিক সময়
ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও শারীরিক চাহিদার ভিত্তিতে প্রোটিন গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা উচিত।
পেশি গঠন ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য
গ্রহণের সঠিক সময়: ব্যায়ামের আগে ও পরে, বিশেষত ব্যায়ামের ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে
প্রয়োজনীয় পরিমাণ: ১.৬-২.৪ গ্রাম প্রতি কেজি ওজনের জন্য
পেশি ক্ষয় রোধের জন্য
গ্রহণের সঠিক সময়: সকাল, রাতসহ দিনে কয়েকবার
কারণ: প্রোটিন বারবার গ্রহণ করলে পেশির ক্ষয় রোধ হয়, বিশেষ করে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা ক্যালোরি ঘাটতি থাকলে
ক্রীড়া পারফরম্যান্স ও পুনরুদ্ধারের জন্য
গ্রহণের সঠিক সময়: ব্যায়ামের পর, কারণ এটি পেশির পুনরুদ্ধার দ্রুত করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
প্রয়োজনীয় পরিমাণ: ১.২-১.৬ গ্রাম প্রতি কেজি ওজনের জন্য
প্রোটিন: খাবার না কি সাপ্লিমেন্ট?
প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন পাওয়া যায় মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল, কুইনোয়া এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকে। তবে যারা দৈনিক প্রোটিন চাহিদা পূরণে সমস্যায় পড়েন, তাদের জন্য প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
নিউট্রিশনিস্ট রাখি জৈন বলেন, “শরীরের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি ওজনের হিসেবে প্রয়োজন। ৬০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির জন্য তা ৬০ গ্রাম। অনেকের জন্য শুধুমাত্র খাবার থেকে এই চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে যায়, বিশেষত ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে। সেক্ষেত্রে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট সহায়ক হতে পারে।”
অতিরিক্ত প্রোটিন ক্ষতিকর হতে পারে কি?
অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা, হজম সমস্যা, কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি এবং অতিরিক্ত ক্যালোরির কারণে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ৪ গ্রাম/কেজি ওজনের বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য অতিরিক্ত হয়ে যায়। এশাঙ্কা ওয়াহি বলেন, “অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে, যা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে।”
প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যারা ওজন কমানো, পেশি গঠন বা পারফরম্যান্স উন্নত করতে চান। তবে প্রোটিন গ্রহণের সময় এবং পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা জরুরি। অতিরিক্ত গ্রহণ দ্রুত ফল দেবে না, বরং তা শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করাই স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মূল চাবিকাঠি।
সূত্র:https://tinyurl.com/5ek9wsmb
আফরোজা