ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

যেভাবে বুঝবেন আপনার কিডনি আপনার অজান্তেই ড্যামেজ হচ্ছে

প্রকাশিত: ২০:২০, ১৩ মার্চ ২০২৫

যেভাবে বুঝবেন আপনার কিডনি আপনার অজান্তেই ড্যামেজ হচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত।

কিডনি মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে তা নিষ্কাশন করে। কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন হলেও কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। এই প্রতিবেদনে আমরা কিডনি ড্যামেজের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

কিডনি ড্যামেজের কারণ

কিডনি ড্যামেজের অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। তবে অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে, যেমন—

ডায়াবেটিস: রক্তে অতিরিক্ত শর্করার কারণে কিডনির ক্ষুদ্র ফিল্টারিং ইউনিটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কিডনি ড্যামেজের অন্যতম প্রধান কারণ।

প্রস্রাবের বাধা: প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং এটি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রস্রাবে পাথর, প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি বা টিউমার এ ধরনের বাধার কারণ হতে পারে।

অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন: কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে ব্যথানাশক ও প্রদাহনাশক ওষুধ।


কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ স্পষ্টভাবে বোঝা কঠিন হলেও নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি—

১. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা

কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে, যা ক্লান্তি, দুর্বলতা ও শক্তিহীনতার কারণ হতে পারে। কিডনি এরিথ্রোপোয়েটিন (EPO) হরমোন উৎপন্ন করে, যা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনে সাহায্য করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে EPO উৎপাদন কমে যায়, ফলে অ্যানিমিয়া দেখা দেয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

২. মুখ, হাত ও পায়ের ফোলা ভাব

কিডনি সঠিকভাবে ফিল্টার করতে না পারলে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হয়, যা মুখ, হাত ও পায়ে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।

৩. প্রস্রাবে পরিবর্তন

প্রস্রাবের রঙ, গন্ধ, পরিমাণ বা ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তিত হতে পারে। প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, প্রস্রাবে ফেনা দেখা দিতে পারে বা গন্ধ পরিবর্তন হতে পারে।

৪. প্রস্রাবে রক্ত

কিডনি ফিল্টার সঠিকভাবে কাজ না করলে প্রস্রাবে রক্ত মিশে যেতে পারে, যা হেমাচুরিয়া নামে পরিচিত। এটি কিডনি বা মূত্রনালির কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

৫. শ্বাসকষ্ট

কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হতে পারে, যা ফুসফুসে পানি জমার কারণ হতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।

৬. বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা

কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পেলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়, যা বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমার কারণ হতে পারে।

৭. ত্বকে চুলকানি ও খোসা পড়া

কিডনি সঠিকভাবে ফিল্টার করতে না পারলে শরীরে অতিরিক্ত ফসফরাস জমা হতে পারে, যা ত্বকের চুলকানি ও খোসা পড়ার কারণ হতে পারে।

৮. উচ্চ রক্তচাপ

কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।

৯. অনিদ্রা

শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই কিডনি সমস্যার কারণে রাতে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।

১০. মাথা ঘোরা ও মনোযোগের ঘাটতি

কিডনি কার্যক্ষমতা হারালে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, যা মাথা ঘোরা ও মনোযোগের ঘাটতির কারণ হতে পারে।

কিডনি সুস্থ রাখার উপায়

কিডনি সুস্থ রাখতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা জরুরি—

১. রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করা।

৩. অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এড়ানো।

৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, বিশেষ করে লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং কিডনির কার্যক্ষমতা মনিটর করা।

কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সায়মা ইসলাম

×