
ছবি: সংগৃহীত
ধূমপান শুধু ধূমপায়ীর জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং আশপাশের মানুষদের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। যারা সরাসরি ধূমপান করেন না, কিন্তু ধূমপায়ীদের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকেন, তাদের বলা হয় পরোক্ষ ধূমপায়ী। গবেষণা বলছে, পরোক্ষ ধূমপান প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপানের ধোঁয়ায় ৭০০০টিরও বেশি রাসায়নিক উপাদান থাকে, যার মধ্যে শতাধিক উপাদান বিষাক্ত এবং প্রায় ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। দীর্ঘমেয়াদে পরোক্ষ ধূমপান বেশ কিছু ভয়ংকর রোগের জন্ম দিতে পারে।
পরোক্ষ ধূমপান থেকে হওয়া ৭টি মারাত্মক রোগ
১. ফুসফুসের ক্যান্সার
পরোক্ষ ধূমপানের দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। গবেষণা বলছে, ধূমপান করেন না এমন ব্যক্তিদেরও ধূমপানের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২. হৃদরোগ ও স্ট্রোক
পরোক্ষ ধূমপান হৃদযন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি ধমনীতে চর্বি জমার হার বৃদ্ধি করে, ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৩. অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপান অ্যাজমার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। যারা আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক হতে পারে।
৪. শিশুদের নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস
ধূমপানের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত উপাদান শিশুদের ফুসফুসের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসসহ অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
৫. গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি
গর্ভবতী মা যদি ধূমপানের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকেন, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর ওজন কমে যাওয়া, জন্মগত ত্রুটি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬. চর্মরোগ ও চুল পড়া
ধূমপানের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ত্বকের বলিরেখা বেড়ে যায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে এবং চুল পড়ার হার বৃদ্ধি পেতে পারে।
৭. কানের সংক্রমণ ও শোনার ক্ষমতা হ্রাস
শিশুদের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপান কানের সংক্রমণের প্রধান কারণগুলোর একটি। এটি তাদের শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।
কীভাবে পরোক্ষ ধূমপান এড়ানো যায়
ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করুন
বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের কেউ ধূমপান করলে তাকে নিরুৎসাহিত করুন
পাবলিক প্লেস, রেস্টুরেন্ট বা অফিসে ধূমপানবিরোধী নিয়ম মেনে চলুন
শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ধূমপানের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন
পরোক্ষ ধূমপান এক নীরব ঘাতক, যা ধূমপায়ীর পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও ক্ষতির মুখে ফেলে। তাই এখনই সচেতন হতে হবে এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও নিরাপদ জীবন পায়
কানন