
ছবিঃ সংগৃহীত
মানুষের মস্তিষ্কের সুস্থতা ঠিক রাখা শরীরের অন্যান্য অংশের যত্ন নেওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউরোকগনিটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ন্যাচারোপ্যাথিক ডাক্তার হিদার স্যান্ডিসন জানিয়েছেন, কিছু নির্দিষ্ট সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, স্মৃতিশক্তি রক্ষা এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
প্রায় ১৫ বছর ধরে মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করা এই চিকিৎসকের মতে, পুষ্টিগত ঘাটতি পূরণ করা গেলে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মনোভাব উন্নত করা সম্ভব।
আপনিও যদি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে চান, তাহলে নিচে দেওয়া পাঁচটি সাপ্লিমেন্ট আপনার খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
১. নুট্রোপিকস
নুট্রোপিকস হলো বিভিন্ন ভিটামিন, ফ্যাট, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভেষজ উপাদানের মিশ্রণ, যা মানসিক স্বচ্ছতা, মনোযোগ বৃদ্ধি, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ এবং ভালো ঘুমের জন্য কার্যকর।
ডা. স্যান্ডিসন জানিয়েছেন, তিনি এমন দিনগুলিতে নুট্রোপিকস গ্রহণ করেন, যখন তাকে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হয়—যেমন জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বা প্রচুর কাজের চাপে।
এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে, তবে এটি গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যারা মানসিক রোগের ওষুধ গ্রহণ করেন, কারণ এটি অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
২. ভিটামিন ডি ও কে
শুধু হাড়ের শক্তির জন্যই নয়, বরং মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্যও ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকলে স্মৃতিভ্রংশ বা মানসিক অবক্ষয়ের ঝুঁকি কমে।
ভিটামিন কে, ভিটামিন ডি-এর সঙ্গে মিলে শরীরে ক্যালসিয়ামের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে, যাতে এটি অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানে জমা না হয়। এছাড়া, উচ্চমাত্রার ভিটামিন কে গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো হয়।
অনেকেই পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পাওয়ার কারণে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভোগেন। তাই দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে ভিটামিন ডি ও কে সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে।
৩. ওমেগা-৩
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা সাধারণত মাছের তেলে পাওয়া যায়, শক্তিশালী প্রদাহনাশক (অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি) হিসেবে কাজ করে এবং মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে।
যেহেতু হৃদযন্ত্রের জন্য যা ভালো, তা মস্তিষ্কের জন্যও ভালো, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-৩ গ্রহণ করলে স্নায়বিক প্রদাহ কমে, যা স্মৃতিভ্রংশ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাসের সঙ্গে যুক্ত।
ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের কোষের কাঠামো মজবুত রাখে, তাদের নমনীয় রাখে এবং কার্যকারিতা উন্নত করে। তবে এর গুণগত মান বজায় রাখতে এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা উচিত, যাতে এটি অক্সিডাইজ না হয়ে যায়, কারণ অক্সিডাইজড ওমেগা-৩ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৪. প্রোবায়োটিকস
আমাদের অন্ত্র (গাট) ও মস্তিষ্কের মধ্যে গভীর সংযোগ রয়েছে, এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তা মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রোবায়োটিকস হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা হজমে সহায়তা করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে, যাতে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ পায়।
ডা. স্যান্ডিসন ব্যাখ্যা করেছেন যে, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এমনকি সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারও উৎপাদন করে, যা মেজাজ ও মানসিক কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে, একটি সুস্থ অন্ত্র স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি হ্রাস করতেও সহায়ক হতে পারে। তাই অন্ত্র ও মস্তিষ্ক উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রোবায়োটিকস গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ডাইজেস্টিভ এনজাইমস
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাকস্থলী পর্যাপ্ত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপাদন করতে পারে না, যা খাবার হজম ও পুষ্টি শোষণের জন্য জরুরি।
ডাইজেস্টিভ এনজাইমস এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙতে।
বিভিন্ন ধরনের ডাইজেস্টিভ এনজাইম বিভিন্ন কাজ করে—যেমন লিপেজ ফ্যাট হজম করতে, প্রোটেজ প্রোটিন ভাঙতে, এবং ল্যাকটেজ দুগ্ধজাত খাবার হজমে সহায়তা করে।
যথাযথ হজম নিশ্চিত হলে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় এবং কার্যকারিতা আরও উন্নত হয়। তবে যাদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।
উপসংহার
মস্তিষ্কের সুস্থতা ধরে রাখতে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. হিদার স্যান্ডিসনের পরামর্শ অনুযায়ী, নুট্রোপিকস, ভিটামিন ডি ও কে, ওমেগা-৩, প্রোবায়োটিকস ও ডাইজেস্টিভ এনজাইমস গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি ও মানসিক সুস্থতা উন্নত হতে পারে।
তবে, যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময় নিরাপদ সিদ্ধান্ত। মস্তিষ্কের যত্ন নিতে ভুলবেন না—কারণ এটি আপনার পুরো শরীরের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র!
ইমরান