ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

উন্নত চিকিৎসার নতুন দিগন্ত

কুনমিংয়ে বাংলাদেশী রোগীদের প্রথম ব্যাচের চিকিৎসা শুরু

অপূর্ব কুমার, চীনের কুনমিং থেকে

প্রকাশিত: ০০:১৩, ১৩ মার্চ ২০২৫

কুনমিংয়ে বাংলাদেশী রোগীদের প্রথম ব্যাচের চিকিৎসা শুরু

বাংলাদেশের রোগীদের স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসার নতুন গন্তব্য হতে যাচ্ছে চীন

বাংলাদেশের রোগীদের স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসার নতুন গন্তব্য হতে যাচ্ছে চীন। মেডিক্যাল পর্যটনকে এগিয়ে নিতে দুই দেশের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কুনমিংয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাচের রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রোগীদের সামনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভালো একটি বিকল্প তৈরি হলো। রোগীদের মনেও সঞ্চার হয়েছে নতুন আশা। 
ইউনান প্রদেশের কুনমিং বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে ফুয়ই ইউনান কার্ডিভাসকুলার হসপিটালে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র নিয়ে তিন শিশুর চিকিৎসা শুরুর মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্ত্রের সূচনা হয়। আগামীতে এই প্রচেষ্টা আরও সফলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের জটিল রোগীদের ভারত ও থাইল্যান্ডের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশীদের মাঝে আশার সঞ্চার করবে বলে ইউনান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ  আশা প্রকাশ করেছেন। 
এর আগে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে বাংলাদেশী রোগীদের প্রথম দল গত সোমবার চায়না ইস্টার্ন এয়ারের একটি বিমানে প্রথম ব্যাচে ১৪ জন ও পরিবারের সদস্য কুনমিং এসেছে। চিকিৎসকদের একটি দল ছাড়াও ৫ জন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধি নিয়ে প্রথম দলে মোট ৩১ জন ছিলেন। প্রথম ব্যাচের সব রোগীকেই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে কর্তৃপক্ষ। 
পাবনা থেকে মো. রিপন এখানে এসেছেন ছেলের হৃদযন্ত্রের ছিদ্র নিয়ে। ৮ বছর বয়সী ছেলের হার্টে দুটো ছিদ্র শনাক্ত হয় ছোট্ট বয়সে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এতদিন চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। ড. শাহরিয়া তার ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য চীন এসেছেন।

বাংলাদেশের রোগীদের কথা চিন্তা করে চীন সরকার সবচেয়ে কাছের প্রদেশ কুনমিংকে বেছে নেয় মেডিক্যাল পর্যটনকে জনপ্রিয় করতে। শুরুতে বাংলাদেশ সরকার চীনকে চিকিৎসাক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানিয়েছিল। চীন সরকার তাতে সায় দেয়। বিকল্প দেশ হিসেবে চীন এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরে রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।  
প্রথম ব্যাচের রোগীদের চিকিৎসা শুরুর দিন উপস্থিত ছিলেন চীনে দায়িত্বপালনরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম। তিনি এই সে ময়ে বলেন, চীনে বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসা শুরুর মাধ্যমে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। চীনে বাংলাদেশের রোগীরা অপেক্ষাকৃত কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা পাবে। ভবিষ্যতে দুই দেশ এই উদ্যোগকে কাজে লাগাতে জোর প্রচেষ্টা লাগাবে।

এ ছাড়া চীন ও বাংলাদেশ ভবিষ্যতে চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে পারস্পরিক কারিগরি সহায়তা ও নিজেদের মধ্যে শিক্ষাগত দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেবে। এই সময়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত লি জিমিং উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখেন। তিনি দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসক ও বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ।
কিশোরগঞ্জের সুচন্দা দাস এসেছেন তা ১৪ মাস বয়সী ছেলে পার্থকে নিয়ে। তিনি সরকারের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রথমদিন সোমবারেই তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ভর্তি হয়েছেন। খাবারসহ যাবতীয় খরচ হাসপাতাল বহন করছে।
প্রথম দিনে কিশোরগঞ্জের নিকলির সেলিনা আক্তারের ছেলে সাজিদ এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সকালে খালি পেটে রক্ত পরীক্ষার পর ইকো কার্ডিওগ্রাম ও সিটিস্ক্যান সম্পন্ন হয়েছে সাজিদের। চিকিৎসকদের আশা দ্রুতই অস্ত্রোপাচারের প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে তার ।
নির্বাহী পরিচালক ও পার্টি সেক্রেটারি সু হেং বলেন, কার্ডিভাসকুলার হসপিটালটি বেজিংয়ের চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা করে থাকে। এই হাসপাতালে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষের ইকোকার্ডিওগ্রাম হয়। চীনের পাশাপাশি কম্বোডিয়ার মানুষ চিকিৎসা নেয়। ১৮ বছর বয়সের নিচের রোগীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। এখানে বিমা সুবিধাও চালু রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশী রোগীদের ক্ষেত্রেও এটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
চীনে বাংলাদেশী রোগীদের জন্য ভাষা প্রতিবন্ধকতা হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে  দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে শুধুমাত্র এই প্রদেশে ২ হাজারের মতো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। দোভাষী হিসেবে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকদের মাধ্যম হিসেবে তারা কাজ  করতে পারেন। ভবিষ্যতে এই খাতকে জনপ্রিয় ও জনবান্ধব করতে এই লক্ষ্যেই  কাজ চলছে।

×