ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

এফএনসি পরীক্ষা কি এবং কেন

ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ১০ মার্চ ২০২৫

এফএনসি পরীক্ষা কি এবং কেন

শরীরের টিউমার বা সন্দেহজনক ক্যানসার অথবা ক্ষতস্থান থেকে একটি সরু সুচের মাধ্যমে দুয়েক ফোঁটা নমুনা নিয়ে প্রসেসের পর মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়, তার নাম এফএনএসি পরীক্ষা। এর পূর্ণনাম ফাইন নিডল এসপিরেশন সাইটোলজি। পরীক্ষাটি করেন প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তবে তা নির্ভরযোগ্য ল্যাবের করার উচিত। নমুনা কালেকশন ক্লিনিসিয়ানও করতে পারেন। তবে একই প্যাথলজিস্ট কালেকশন ও পরীক্ষা করতে পারলে রোগ ডায়াগনোসিস বেশি সঠিক হয়।
এ রিপোর্টে মাইক্রোস্কোপিক ফাইন্ডিং বিস্তারিত লেখা থাকে। তবে যিনি রিপোর্ট দেখেন, তিনি সাধারণত কমেন্ট বা ডায়াগনোসিস সেকশনটাই দেখে থাকেন। কমেন্ট সেকশনে যদি ‘প্লিজ, সি দা ডেসক্রিপশন’ লেখা থাকে, তখন তিনি সব সেকশন পড়ে দেখেন। সাধারণ মানুষও তার নিজের এফএনএসি রিপোর্টের অর্থ বুঝতে চান। তাই সাধারণের জন্য এফএনএসি রিপোর্টের কয়েকটি নমুনা কমেন্ট লিখে তার অর্থ লেখার চেষ্টা করছি।
ক্লিনিসিয়ান যখন রোগী পাঠান এফএনএসি করাতে, তখন এডভাইসে ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস লিখে দেন সাধারণত, যাতে প্যাথলজিস্ট সেই বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে খেয়াল করেন মাইক্রোস্কোপি করার সময়। ক্লিনিসিয়ানের ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস ও প্যাথলজিস্টের প্যাথলজিকাল ডায়াগনোসিসের সমন্বয়ে ফাইনাল ডায়াগনোসিস হয়। কাজেই প্যাথলজিস্টের কাছে ক্লিনিক্যাল ইনফর্মেশন থাকা ভালো। তাতে পরীক্ষার পর প্যাথলজিস্ট রোগীকেও তার রোগের পরিণতি কী হতে পারে, তার একটা ধারণা দিতে পারেন।
এফএনএসি পরীক্ষা হিস্টোপ্যাথলজি (বায়পসি) পরীক্ষার সমান সঠিক নয়। হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা করার হয় টিস্যু নিয়ে। এফএনএসি পরীক্ষা করা হয় টিস্যু থেকে মাত্র কিছু কোষ নিয়ে। হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ডায়াগনোসিসের একুরিসি প্রায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি হয়। কিন্তু এফএনএসির একুরেসি তা হয় না, একটু কম হয়। তাই চিকিৎসা দেওয়ার আগে হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা, বিশেষ করে ক্যানসারের ক্ষেত্রে করে নেওয়া হয়।
কমেন্টে ‘পজিটিভ ফর ম্যালিগন্যান্ট সেল’ লেখার মানে হলো ‘এফএনএসি পরীক্ষা অনুযায়ী এটা ক্যানসার’। একইভাবে ‘নেগাটিভ ফর ম্যালিগন্যান্ট সেল’ মানে ক্যানসার সেল পাওয়া যায়নি। ‘সাসপিসিয়াস ফর ম্যালিগন্যান্ট সেল’ অর্থ যে সেলগুলো পেলাম সেগুলো ক্যানসার সেল বলে সন্দেহ হলো। তবে আমি নিশ্চিত নই। তখন ক্লিনিক্যাল ডাটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন ডাক্তার। মিলে গেলে ক্যানসার। না মিললে ক্যানসার না। হিস্টোপ্যাথলজি করে সন্দেহ দূর করা যেতে পারে। ‘সাজেস্টিভ অব ম্যালিগন্যান্ট সেল’ অর্থ সেলগুলো দেখে মনে হলো ক্যানসার। তবে নিশ্চিত নই। ক্লিনিক্যাল ডাটার সঙ্গে মিলে গেলেই নিশ্চিত ক্যানসার। ‘পসিবিলিটি অব ম্যালিগন্যান্ট সেল’ মানে ক্যানসার সেল হওয়ার আশঙ্কা। তবে মনের জোড় কম। ক্লিনিসিয়ান সিদ্ধান্ত নেবেন, কি করবেন। আরেকবার এফএনএসি করাতে পারেন অথবা হিস্টোপ্যাথলজি করাতে পারেন। ইনফ্লামেশন বা প্রদাহজনিত রোগাক্রান্ত স্থান থেকে এফএনএসি করলে ইনফ্লামেটরি সেল পাওয়া যায়।
বেশির ভাগ সেল নিউট্রোফিল থাকলে কমেন্টে লেখা হয় ‘একুট ইনফ্লামেটরি লেশন’। বেশিভাগ সেল লিম্ফোসাইট হলে কমেন্টে লেখা হয় ‘ক্রনিক নন-স্পেসিফিক ইনফ্লামেশন’। এরকম আরও অনেক টার্ম লেখা হয়। এসবের সঠিক অর্থ বুঝতে না পারায় অনেক রোগী প্যাথলজি রিপোর্ট নিয়ে ভুল বোঝেন। এ লেখা পড়ার পর অনেকের ভুল ভাঙবে।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, (এনআইসিআরএইচ) এবং সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ একাডেমি
অব প্যাথলজি, ঢাকা।
চেম্বার : চিফ কনসালট্যান্ট (প্যাথলজি)
আনোয়ারা মেডিক্যাল সার্ভিসেস, (দ্বিতীয় তলা) ১২, ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইল: ০১৯৭১৫৩৪৩১৭

×