
মাসুকের বয়স ১০ বছর। এখনও সে মাঝে মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। বিব্রতকর অবস্থায় পরে সে। সত্যিই বিব্রতকর, এ রকম ৮% ৫ বছর বয়সীরা, এ রকম ১.৫% ১০ বছর বয়সীরা মাঝে মধ্যে সপ্তাহে অন্তত ২দিন বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। ছেলে শিশুরা মেয়েদের চেয়ে ২গুণ বেশি এ সমস্যায় ভুগে থাকে। আসলে প্রায়শ তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের মূত্রথলির স্ফিটার অপরিপক্ব থাকে। তাদের বাবা মা তাদেরকে যথাযথ টয়লেট ট্রেনিং করেনি। বংশগতিতে দেখা যায় তাদের ভাই বোন বা চাচাতো মামাতো ভাইবোনের ক্ষেত্রে এমনটি ছিল অন্তত ২/৩ ক্ষেত্রে এমনটি ইতিহাস পাওয়া যায়।
* কখনো প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে তারা নতুন করে বিছানা ভিজানো শুরু করে।
* অতিরিক্ত স্বাধীনতাহীনতা ও অতি স্ট্রেসে থাকা বাচ্চাগুলোর মধ্যে বেশি এমনটি হয়।
* কোষ্ট কাঠিন্যের ফলে মূত্র থলির ওপর অযথা চাপ ফেলে এবং বিছানা ভিজানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলেও বিছানা ভিজিয়ে ফেলতে পারে বারে বারে।
* মানসিক ভাবে স্বভাবত এরা সুস্থ থাকে অল্প সংখ্যকের মধ্যে বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা দেখা যায়।
* যে সব সময় বিছানা ভিজিয়ে আসছে তাকে প্রাইমারী এনিউরেসিস, আর যে কিছুদিন শুকনো ছিল যেমন ৬ মাস থেকে ১ বছর, কোন কারণে আবার শুরু, সেক্ষেত্রে এটিকে আমরা বলি সেকেন্ডারি এনিউরেসিস।
* কিছু বাচ্চা দিনের বেলাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে সহজভাবে নেওয়া যাবে না। যত সব কারণ যেমন প্রস্রাবের থলির স্নায়ু অসংবেদনশীলতা, যেমন জন্মগত কোন ত্রুটি, যেমন যৌন অপব্যবহারের শিকার ইত্যাদি সন্ধান করতে হবে আবার নিতান্তই ফিজিলজিক্যাল অর্থাৎ স্বাভাবিক কারণে প্রস্রাবের অতি বেগে তারা ভুগে থাকতে পারে।
* কিভাবে মোকাবিলা করা যায় এ সমস্যা। প্রথম বাচ্চা ও বাবা মায়ের মধ্যে সমস্যাটি সম্পর্কে সমস্যক ধারণা দেওয়া। সামন্য সব কারণ জড়িত কিন্তু অসামান্য ঝামেলা এ সমস্যা উত্তেরণে উভয় পক্ষের সহযোগিতা লাগবে। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন বিছানা ভিজাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে। মনে রাখতে হবে তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর শতকরা ৫টি বাচ্চা এ সমস্যা থেকে আপনা আপনি উত্তোরিত হয়।
* বিছানা ভেজানোর জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। বকা যাবে না। কিন্তু যে দিন সে শুকনো রাখল তাকে আদর করে দিন-
* যেদিন সে বিছানা ভিজায়ে আবার গোছগাছ করে শুকনো বিছানা তৈরি করে শুলো সে দিন তাকে ‘তারকা পরস্কার’দিন। এতে করে তার মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হবে এবং আস্তে আস্তে সে আপনার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সফল হবে।
* এতেও যদি না হয় তাহলে ‘এনিউরেটিক এ্যালাম ব্যবহার করতে হবে। এই এ্যালমের সেন্সর বাচ্চার প্যান্টের ভিতর দেওয়া থাকবে ভিজলেই এটা বেজে উঠবে আর তার ঘুম ভাঙবে সে উঠে বাথরুমে যাবে। আবার বিছানা গোছগাছ করে শুবে এভাবে তার মধ্যে তৈরি হবে অন্তগত সতর্কতা। এটিই সবচেয়ে সফল চিকিৎসা পদ্ধতি বলা যায়।
* কিছু ওষুধ আছে কিন্তু ওষুধ বরং কম কার্যকর কোন ক্যাম্পে যাচ্ছে কিংবা চাচাতো মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে একত্রে শুবে তখন তাকে আমরা ডেসমোপ্রেসিন খেতে বলব। কদিন সে বিছানা শুকনো রাখবে।
* অন্যান্য ওষুধ যেমন ইমিপ্রামিন আছে। ফলাফল ভাল না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।
বিছানা ভেজানোর সমস্যাটি স্বাভাবত কোন জটিল সমস্যা না। আপনিতেই সেরে যায় প্রয়োজনে যথাযথ টয়লেট ট্রেনিং বাচ্চাকে মাসসিক চাপ মুক্ত রাখা। অতি পানি পান অথবা একেবারেই পানি খাচ্ছে না দুটোই তার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
ডাঃ এ টি এম রফিক উজ্জ্বল
হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল
০১৭১৫২৮৫৫৫৯