
ছবি: সংগৃহীত।
নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে রোজা শুধু ধর্মীয় অনুশীলনই নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। ইসলাম ধর্মের প্রতিটি বিধান মানবকল্যাণে নিবেদিত, যদিও অনেক ক্ষেত্রে এর সুফল সম্পর্কে আমরা অবগত নই।
বিশিষ্ট ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, "মানবদেহের ৮৫ শতাংশ রোগের উৎপত্তি পেট থেকে।" তাই রোজার মাধ্যমে এসব রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় সম্ভব।
জাপানি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমি তার গবেষণায় অটোফেজি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এর জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অটোফেজি হলো কোষের এক ধরনের স্ব-পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, যেখানে কোষ নিজের অকার্যকর ও ক্ষতিকর অংশগুলো পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে কার্যক্ষম করে তোলে। সারাক্ষণ খাওয়ার অভ্যাস এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, তবে রোজা রাখলে অটোফেজি প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, যা আলঝেইমার্স, পারকিনসন্সসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
রোজার উপকারিতা
১. চর্বি কমানো: রোজা রাখলে শরীর সংরক্ষিত গ্লাইকোজেন ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যে ফুরিয়ে গেলে চর্বি পোড়ানো শুরু করে। এটি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ানো, রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং পেটের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
২. পেটের স্বাস্থ্য রক্ষা: রোজা পেটের উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
৩. ওজন কমানো: বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পরিচালিত ৩৫টি গবেষণায় দেখা গেছে, রমজান শেষে গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি ওজন কমে।
৪. রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: তুরস্কসহ ১৬টি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, রোজা রক্তে সুগারের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৫. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও বাহরাইনের ৯১টি গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রোজা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ২০১৯ সালে লন্ডনের পাঁচটি মসজিদে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার গড়ে সাত মিলিমিটার মার্কারি এবং ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার তিন মিলিমিটার মার্কারি কমে।
বিজ্ঞান যেমন রোজার বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রমাণ করেছে, তেমনি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি অত্যন্ত কল্যাণময় একটি বিধান। শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতির জন্য রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
সায়মা ইসলাম