
ছবি: সংগৃহীত।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে অনেকেরই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলেও, কিছু মানুষের জন্য এটি বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ আলো নিভিয়ে চোখ বন্ধ করেও ঘুমের অপেক্ষায় থাকেন, কিন্তু ঘুম আসে না। আবার অনেকে ঘুমিয়ে পড়লেও মাঝরাতে জেগে যান এবং তারপর আর সহজে ঘুমাতে পারেন না।
নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এর প্রভাব শরীর ও মন—উভয়ের ওপর পড়ে। কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এই সমস্যার সমাধানে অনেকে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেন। কেউ হলুদ-দুধ পান করেন, কেউ কলা বা আখরোট খান। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিদ্রার কার্যকর সমাধান হতে পারে কুমড়া বীজ।
কুমড়া বীজ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পুষ্টিবিদদের মতে, কুমড়া বীজ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিংক এবং ভিটামিন বি-এর মতো উপাদান থাকে, যা ঘুম আনতে সহায়তা করে। শরীরে এই উপাদানগুলোর অভাব হলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কুমড়া বীজে থাকা গ্লাইসিন নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে এবং গভীর ঘুম নিশ্চিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লাইসিন শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে ঘুমের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং উদ্বেগ কমায়।
কুমড়া বীজের উপকারী উপাদানসমূহ
১. ম্যাগনেশিয়াম
স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে ম্যাগনেশিয়াম। মাত্র ২৮ গ্রাম কুমড়া বীজ থেকেই শরীরের প্রয়োজনীয় ম্যাগনেশিয়ামের ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
২. ট্রিপটোফ্যান
ট্রিপটোফ্যান এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা পরে মেলাটোনিনে রূপান্তরিত হয়। মেলাটোনিন ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন।
৩. জিংক
জিংক, ট্রিপটোফ্যানকে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে এবং মেলাটোনিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঘুম ও মস্তিষ্কের কার্যক্রমের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, তাই এই উপাদানও ঘুমের জন্য সহায়ক।
কীভাবে কুমড়া বীজ খাবেন?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন ২৮-৩০ গ্রাম কুমড়া বীজ খেতে পারেন, যদি তার কিডনি ও লিভারের কোনো সমস্যা না থাকে। এটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়—
- শুকনো কড়াইয়ে হালকা ভেজে স্ন্যাক্স হিসেবে
- স্মুদিতে মিশিয়ে
- স্যুপে ছড়িয়ে
- কুমড়া বীজের মাখন হিসেবে
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে ঘুমের সমস্যা দূর করা সম্ভব। তাই অনিদ্রা দূর করতে আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় কুমড়া বীজ যুক্ত করুন।
সায়মা ইসলাম