ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

সন্ধ্যার যে অভ্যাসগুলো জীবনে কখনই আপনাকে সুখী হতে দেবে না

প্রকাশিত: ১৩:০২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৩:১৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সন্ধ্যার যে অভ্যাসগুলো জীবনে কখনই আপনাকে সুখী হতে দেবে না

ছবিঃ সংগৃহীত

সুখ অনেক সময় একটি রহস্যের মতো মনে হতে পারে। কিছু মানুষ সহজে সুখী হতে পারে, আবার অন্যরা তা পাওয়ার জন্য সারাজীবন চেষ্টা করে। যেভাবে আমরা আমাদের দিন শেষ করি, তা আমাদের সামগ্রিক মানসিকতা গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখে। কিছু অভ্যাস শান্তি এবং তৃপ্তির অনুভূতি এনে দেয়, আবার কিছু অভ্যাস আমাদের সুখ-সাচ্ছন্দ্য নষ্ট করে, যা আমরা অনুধাবনও করি না।

এখানে ৮টি সন্ধ্যাবেলার অভ্যাস দেওয়া হলো যা আপনাকে সত্যিকারের সুখ অনুভব করতে বাধা দিতে পারে:

১) আপনি সবকিছু ভুল হওয়ার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন
দিনটি শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু আপনার মন তা ভুলে যেতে দেয় না। আপনার ভুল কথাবার্তা, যা বলা উচিত ছিল যা ছিল না তা পুনরায় ভাবেন। হয়তো আপনি পরবর্তী দিনের জন্য খারাপ পরিস্থিতির কথা কল্পনা করেন। এসব চিন্তা একটির পর একটা চলতে থাকে, এবং আপনি একটি অনুশোচনা এবং চিন্তার স্রোতে আটকে পড়েন।

সত্যিকারভাবে সুখী মানুষরা এমন সময় অতিবাহিত করেন না, তারা ভুল থেকে শেখেন এবং সামনে এগিয়ে যান। রাতের বেলা যদি আপনি নিজের সমালোচনা এবং উদ্বেগের মধ্যে ডুবে থাকেন, তবে সুখ সবসময় আপনার হাতের নাগালের বাইরে থাকবে।

২) আপনি নিজের অনুভূতিগুলি মুছে ফেলেন
সারা দিন যা যা ভুল হয়েছে তা ভাবতে ভাবতে, পুরোপুরি চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য ফোন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিং বা টিভি দেখা, বা কোনো অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় খাওয়া অনেকেই করে থাকেন।

এটি বিশ্রাম মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা নয়। আপনি আসলে নিজেকে বিশ্রাম দিতে বা পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হচ্ছেন না, বরং আপনার চিন্তা থেকে নিজেকে বিভ্রান্ত করছেন। সুখী মানুষরা মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য নিজেদের সময় দেন।

৩) আপনি আগামীকালের চিন্তায় রাতকে নষ্ট করেন
মার্ক টোয়েন একবার বলেছিলেন, “আমি জীবনে অনেক চিন্তা করেছি, যার বেশিরভাগ কিছুই হয়নি।”

অনেকে রাতে বিছানায় শুয়ে, পরবর্তী দিনের সবকিছু নিয়ে চিন্তা করেন। আবার অনেকে খারাপ পরিস্থিতির কথা ভাবেন। সুখী মানুষরা জানেন যে, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তা করে রাতের শান্তি নষ্ট করা উচিত নয়। তারা জানেন যে চিন্তা করে পরিস্থিতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, কিন্তু একটি ভালো রাতের ঘুম তাদের সামনে আসা সমস্ত সমস্যার মোকাবেলা করার শক্তি দেয়।

৪) আপনি ঘুমানোর আগে স্ক্রিনের দিকে তাকান
মানবদেহ কৃত্রিম আলো সহ্য করতে তৈরি হয়নি। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের আগে, সূর্য আমাদের ঘুমের চক্র নির্ধারণ করত—যখন অন্ধকার হয়ে যেত, আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই মেলাটোনিন হরমোন উৎপন্ন করত, যা আমাদের বিশ্রাম নিতে এবং শিথিল হতে সাহায্য করে।

এখন ডিভাইসের ক্ষতিকারক আলো রাতে আমাদের চোখে প্রবাহিত করে, আমাদের মস্তিষ্ককে মনে করিয়ে দেয় যে এখনও দিন রয়েছে। এটা আমাদের ঘুমানোর জন্য বাধা হয়ে কাজ করে। সুখী মানুষরা তাদের ঘুমের প্রতি গুরুত্ব দেন।

৫) আপনি বিছানায় গিয়েও দিনের সমাপ্তি করেন না
এটা মনে হতে পারে যে, দিনটি কেবল আমাদের জীবনের একটি অংশ। সুখী মানুষরা শুধু তাদের দিনটি অতিবাহিতই করে না, তারা সেটি শেষও করে। তারা তাদের দিনটি পর্যালোচনা করেন। তারা যে কোনো অসমাপ্ত বিরক্তি বা অপ্রকাশিত কথা ঘুমে নিয়ে যান না, কারণ তারা জানেন যে, কোনো অমীমাংসিত বিষয় তাদের পরবর্তী দিনটি আরও ভারী করবে।

৬) আপনি যা সত্যিকারভাবে আনন্দ দেয় তা উপেক্ষা করেন
সন্ধ্যাবেলা হওয়া উচিত বিশ্রামের সময়, কিন্তু অনেকে সারাদিনের কাজ শেষে শুধু খাবার খায়, টিভি দেখে বা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিং করে এবং নিজের ভালোলাগার কোন কাজ না করা। সুখী মানুষরা তাদের সময় বুঝে ব্যয় করেন, তারা শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য না, বরং যা তাদের সত্যিকারের আনন্দ দেয় সেটি করে থাকেন।

৭) রাতকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন না
দীর্ঘ সময় ধরে অনেকে বিশ্বাস করে যে, বিশ্রাম উপভোগ করতে হলে কাজের তালিকা শেষ করতে হবে, বিশ্রাম নিলে সেটা অসম্ভব হবে। সুখী মানুষরা জানেন যে বিশ্রাম বা ঘুম অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়, বরং অত্যন্ত জরুরি।

৮) আপনি দিনের শেষে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন না
এটা স্বাভাবিক যে জীবনে ভুল হবেই এবং যা ঠিক হয়নি তা নিয়ে চিন্তাও হবে। সুখী মানুষরা তাদের দিন শেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু খুঁজে বের করেন—যত ছোটই হোক না কেন।

সুখ আসলে বসে বসে ভাবার বিষয় নয় যে এটা এমনি এমনি হয়ে যাবে। এটি ছোট ছোট কাজগুলোতেই রয়েছে, বিশেষ করে দিনের শেষটাতে। আমাদের অভ্যাসই আমাদের অনুভূতিকে গঠন করে, তা আমরা বুঝতে না পারলেও।

আবীর

×