ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

 যে ১০ টি খাবার হজমশক্তি বাড়ায়

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 যে ১০ টি  খাবার হজমশক্তি বাড়ায়

ছবিঃ সংগৃহীত

 যে ১০ টি  খাবার হজমশক্তি বাড়ায়

প্রোবায়োটিক আমাদের  অন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী। প্রোবায়োটিক হলো একটি ক্ষুদ্রঅণুজীব যা আমাদের শরীরে বসবাস করে , আমাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।

 প্রোবায়োটিক গ্রহণের জন্য  সাপ্লিমেন্ট পাওয়া গেলেও সবথেকে ভালো ও স্বাস্থ্যকর উপায় হলো প্রাকৃতিকভাবে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। প্রোবায়োটিক মূলত ফারমেন্টেড (গাঁজনকৃত) খাবারে পাওয়া যায়। ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়, যা খাবারকে জীবিত অণুজীব সমৃদ্ধ করে।

সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ফারমেন্টেড খাবার হচ্ছে দই, তবে আরও অনেক ধরনের ফারমেন্টেড খাবার রয়েছে, যেমন মিসো, সওয়ারক্রাউট, মাখন দুধ, কালচার্ড বাটার, কেফির এবং কম্বুচা।

স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের জন্য  প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ ১০ টি খাবার

১. দই

 দই হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য প্রোবায়োটিক-সমৃদ্ধ খাবার। এটি দুধ ফারমেন্টেড করে তৈরি করা হয় , যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হজমে সহায়তা করে। সর্বোচ্চ উপকার পেতে প্রাকৃতিক ও অর্গানিক দই বেছে নিন, যাতে চিনি বা কৃত্রিম উপাদান যোগ করা হয়নি। গ্রিক দই সাধারণত প্রোবায়োটিকের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস, কারণ এতে বেশি পরিমাণ প্রোটিন ও দুধের এনজাইম থাকে।

২. কেফির

কেফির হলো দইয়ের মতোই এক ধরনের ফারমেন্টেড পানীয়। যদিও এটি নারকেল দুধের মতো নন-ডেইরি সংস্করণেও পাওয়া যায়, তবে বেশিরভাগ কেফিরই দুধ থেকে তৈরি হয়। কেফিরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট থাকে, যা একে প্রোবায়োটিকের অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস করে তোলে। কেফিরের উপকারিতা শুধু অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি উচ্চ ক্যালসিয়াম থাকার কারণে হাড়ের স্বাস্থ্যও উন্নত করে।

৩. পাকা পনির

পারমেজান, গৌডা ও চেডারের মতো বয়স্ক বা পাকা চিজে ফারমেন্টেশনের কারণে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক থাকে। যদিও এতে দই বা কেফিরের মতো বেশি পরিমাণ জীবিত ব্যাকটেরিয়া থাকে না, তবুও এটি অন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভালো উৎস হতে পারে। এছাড়া, পাকা চিজে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফ্যাট-সোলিউবল ভিটামিন থাকে, যা হাড়ের গঠনে সহায়ক। তার ওপর, এটি খেতেও বেশ সুস্বাদু!

৪. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার

অ্যাপল সাইডার ভিনেগার শুধু রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষার জন্য জনপ্রিয় নয়, এটি প্রোবায়োটিকেও সমৃদ্ধ। এটি অ্যাসিড অ্যাসিটিক ব্যাকটেরিয়া  দ্বারা ফারমেন্টেড করা হয়, যা অন্ত্রের জন্য উপকারী। অপরিশোধিত  এবং অর্গানিক অ্যাপল সাইডার ভিনেগার গ্রহণ করলে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি পায় এবং হজমক্ষমতা বাড়ে । এটি শরীরের pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

৫. কিমচি

কিমচি হলো একটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান খাদ্য, যা ফারমেন্টেড করা বাঁধাকপি বা অন্যান্য শাকসবজি দিয়ে তৈরি এবং একে মরিচ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন মশলা দিয়ে মেশানো হয়। ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার সময় এতে ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা এটিকে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ করে। কিমচি শুধু প্রোবায়োটিক নয়, বরং এটি ভিটামিন ও খনিজেও সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হজমশক্তি উন্নত করতে সহায়ক।

৬. কম্বুচা

কম্বুচা একটি ফারমেন্ট করা চা-ভিত্তিক পানীয়, যা উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট  ধারণ করে। এর ডিটক্সিফাইং এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহ প্রতিরোধী) বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি পরিচিত। "স্কোবি" নামক ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের একটি বিশেষ উপনিবেশ দিয়ে চা ফারমেন্ট করায় এটি অন্ত্রের জন্য উপকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে।

৭. মিসো

মিসো হলো একটি ফারমেন্ট করা পেস্ট, যা মূলত সয়াবিন থেকে তৈরি এবং জাপানি খাদ্যসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি হজমে সহায়তা করে, অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। বিশেষত, নিরামিষভোজী ও ভেগানদের জন্য এটি ভালো প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২ , খনিজ এবং প্রোবায়োটিকের উৎস হিসেবে কার্যকর।

৯. সাওয়ারক্রাউট

সাওয়ারক্রাউট হল ফারমেন্টেড বাঁধাকপি, যা কিমচির মতোই ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া ধারণ করে। এটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিকের চমৎকার উৎস, পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে। নিয়মিত সাওয়ারক্রাউট খাওয়া হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে পারে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

১০. নাট্টো

নাট্টো একটি আঠালো ধরনের খাবার, যা খেতে একটু অভ্যাসের প্রয়োজন হলেও, এর স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ গুরুত্বপূর্ণ । এটি ব্যাসিলাস সাবটিলিস ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ফারমেন্ট করা সয়াবিন থেকে তৈরি একটি জাপানি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। নাট্টোতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন কে-২ এবং প্রোবায়োটিক উপাদান রয়েছে। এটি হজমে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক প্রোটিন ও উপকারী এনজাইম থাকার কারণে হাড় ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

 

আফিয়া

×