ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

কনুই ব্যথার কিছু কারণ

ডা. এম ইয়াছিন আলী

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কনুই ব্যথার কিছু কারণ

হাতের কুনইতে ব্যথা (Elbow Pain) একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
কুনইতে ব্যথার কারণ
১. চোট বা আঘাত :
কুনইয়ে পড়ে যাওয়া, সরাসরি আঘাত লাগা বা হাড় ফেটে যাওয়া।
২. টেন্ডিনাইটিস:
ক. টেনিস এলবো (Tennis Elbow): বেশি পরিশ্রম বা কুনইয়ের বাইরের পেশির ওপর চাপ পড়ার কারণে।
খ. গল্ফার এলবো (Golfer's Elbow): কুনইয়ের ভেতরের পেশিতে বেশি চাপ পড়ার কারণে।
৩. আর্থ্রাইটিস :
অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত রোগ, বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস।
৪. বার্সাইটিস (Bursitis) :
কুনইয়ের জয়েন্টের বারসা (তরল ভরা থলি) ফোলাভাব বা প্রদাহ।
৫. স্নায়ুর সমস্যা:
ক. আলনার নার্ভ কমপ্রেশন: হাতের পেছনের দিকের স্নায়ু চাপে পড়ে ব্যথা বা অসাড়ভাব।
খ. পিনচড নার্ভ (Pinched Nerve): স্নায়ু চাপে ব্যথা হয়।
৬. ফ্র্যাকচার বা হাড় ভেঙে যাওয়া :
আঘাতজনিত হাড় ভেঙে গিয়ে কুনইতে ব্যথা হয়।
লক্ষণ :
১. ব্যথার ধরন:
ব্যথা মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
২. ফোলাভাব :
কুনইয়ের চারপাশ ফুলে যেতে পারে।
৩. নড়াচড়া করার সমস্যা:
কনুই বাঁকানো বা সোজা করতে কষ্ট হয়।
৪. ব্যথা ছড়িয়ে পড়া :
অনেক সময় ব্যথা নিচের হাতে বা কাঁধ পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
৫. অসাড়তা বা ঝিনঝিনি অনুভূতি :
বিশেষ করে স্নায়ুর সমস্যায়।
চিকিৎসা :
১. প্রাথমিক চিকিৎসা (RICE পদ্ধতি) :
ক. Rest : কুনইকে বিশ্রাম দিন এবং ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
খ. Ice : ব্যথার স্থানে ১৫-২০ মিনিট বরফ দিন, দিনে ৩-৪ বার।
গ. Compression : ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে কুনইয়ে হালকা পেঁচিয়ে রাখুন।
ঘ. Elevation : হাত উঁচু করে রাখুন, যাতে ফোলাভাব কমে।
২. ওষুধ:
ক. ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক।
খ. আর্থ্রাইটিস থাকলে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে কর্টিকোস্টেরয়েড।
৩. ফিজিওথেরাপি :
ক. মাংসপেশি ও স্নায়ুর ব্যথা কমানোর পাশাপাশি কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই কার্যকর।
৪. ইনজেকশন থেরাপি:
ক. টেনিস বা গল্ফার এলবোতে কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে।
৫. সার্জারি (জরুরি প্রয়োজনে) :
যদি হাড় ভেঙে যায়, স্নায়ুর চাপে সমস্যা হয় বা আর্থ্রাইটিস গুরুতর হয়, তবে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ক. অতিরিক্ত ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
খ. কাজের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন।
গ. পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ঘ. ক্রীড়া বা অন্যান্য কাজের আগে গরম করার অনুশীলন করুন।
কুনইতে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা কোনো জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল। বাড়ি: ২২/এ, রোড:৪/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
০১৭৮৭১০৬৭০২

×