
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান ব্যস্ত ও প্রতিযোগিতামূলক জীবনে টেনশন বা মানসিক চাপ মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। তবে অতিরিক্ত টেনশন দীর্ঘমেয়াদে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ শুধু মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে না, এটি বিভিন্ন জটিল রোগেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
শারীরিক ক্ষতি:
১. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি: অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ২. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়া: দীর্ঘমেয়াদি টেনশন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে সংক্রমণ এবং বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। ৩. হজমজনিত সমস্যা: টেনশন থাকার ফলে পাকস্থলীতে গ্যাস, অ্যাসিডিটি এবং আলসারের সমস্যা হতে পারে। ৪. মাংসপেশীর ব্যথা ও ক্লান্তি: অতিরিক্ত টেনশন দেহের মাংসপেশীগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
মানসিক ক্ষতি:
১. উদ্বেগ ও বিষণ্নতা: অতিরিক্ত টেনশন মানুষকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে এবং বিষণ্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২. মেমোরি ও মনোযোগ কমে যাওয়া: দীর্ঘ সময় ধরে চাপের মধ্যে থাকলে মানুষের স্মরণশক্তি এবং মনোযোগের মাত্রা কমে যেতে পারে। ৩. ঘুমের সমস্যা: মানসিক চাপের কারণে অনিদ্রা, দুঃস্বপ্ন ও বিশ্রামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ৪. অবসাদ ও কর্মক্ষমতা হ্রাস: অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব:
১. পরিবার ও সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব: অতিরিক্ত টেনশন মানুষকে সহজেই রাগান্বিত বা হতাশাগ্রস্ত করে তুলতে পারে, যা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে। ২. কর্মস্থলে সমস্যা: কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ থাকলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। ৩. নেশায় আসক্তি: অনেক মানুষ টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধূমপান, মদ্যপান বা মাদকের আশ্রয় নেয়, যা পরবর্তীতে আরও বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কীভাবে টেনশন কমানো যায়?
১. নিয়মিত ব্যায়াম করা – শরীরচর্চা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা – মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। ৩. পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো – সামাজিক সম্পর্ক মানসিক প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে। ৪. মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম – এগুলো মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে। ৫. সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা – স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে শরীর ও মন ভালো থাকে। ৬. পরামর্শ গ্রহণ করা – প্রয়োজন হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত টেনশন মানুষের শরীর ও মন উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অনুধাবন করা দরকার। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য টেনশন কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
শরিফুল